জমজমের পানি পান করার নিয়ম ও দোয়া

মসজিদুল হারামের কাছে অবস্থিত পবিত্র জমজম কূপ ইসলামের ইতিহাসে এক অলৌকিক নিদর্শন। হাজেরা (আ.) ও ইসমাঈল (আ.)-এর কাহিনির সঙ্গে জড়িত এই বরকতময় পানি আজও নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রবাহিত হচ্ছে। মুসলমানদের জন্য জমজমের পানি শুধু শারীরিক তৃষ্ণা নিবারণের উপায় নয়, এটি আত্মিক প্রশান্তি, শেফা ও বরকতের উৎস।

সহিহ হাদীসে বর্ণিত আছে, নবী করিম (সা.) নিজে জমজমের পানি পান করেছেন এবং এর নিয়ম ও দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন। জমজমের পানি আল্লাহর রহমত ও দোয়া কবুলের অন্যতম মাধ্যম। সহিহ হাদীসে এসেছে, “জমজমের পানি যে নিয়্যাতে পান করা হয়, আল্লাহ তা পূর্ণ করেন।”

জমজমের পানি পান করার সময় মনোযোগ সহকারে দোয়া করা অত্যন্ত বরকতময় আমল। যেমন সাহাবী ইবনু আব্বাস (রা.) পড়তেন— “اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا، وَرِزْقًا وَاسِعًا، وَشِفَاءً مِنْ كُلِّ دَاءٍ”। এই দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে জ্ঞান, রিজিক ও আরোগ্য প্রার্থনা করা হয়, যা হজ ও উমরাহ যাত্রীদের জন্য এক বিশেষ আত্মিক অনুপ্রেরণা।

জমজমের পানি পান করার নিয়ম ও দোয়া

জমজমের পানি পান করার শিষ্টাচার

ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন —

“إِذَا شَرِبْتَ مِنْهَا، فَاسْتَقْبِلِ الْقِبْلَةَ، وَاذْكُرِ اسْمَ اللهِ، وَتَنَفَّسْ ثَلاَثًا، وَتَضَلَّعْ مِنْهَا، فَإِذَا فَرَغْتَ، فَاحْمَدِ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ، فَإِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ : إِنَّ آيَةَ مَا بَيْنَنَا، وَبَيْنَ الْمُنَافِقِينَ، إِنَّهُمْ لاَ يَتَضَلَّعُونَ مِنْ زَمْزَمَ”

“যখন তুমি জমজমের পানি পান করবে, তখন কিবলামুখী হও, আল্লাহর নাম স্মরণ করো, তিন নিশ্বাসে পান করো, পেট ভরে পান করো এবং শেষে আল্লাহর প্রশংসা করো। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমাদের ও মুনাফিকদের পার্থক্য হলো — মুনাফিকরা পেটভরে জমজমের পানি পান করে না।” (ইবন মাজাহ, আস-সুনান, ৩০৬১)

জমজমের পানি পান করার শিষ্টাচার

জমজমের পানি পান করার পাঁচটি সুন্নাহ

  • কেবলামুখী হয়ে পান করা
  • “বিসমিল্লাহ” বলা
  • তিনবারে (তিন নিশ্বাসে) পান করা
  • পেট ভরে পান করা
  • শেষে “আলহামদুলিল্লাহ” বলা

এছাড়াও নিজের চাওয়া নিয়্যাতে দোয়া করা এবং কিছুটা পানি মাথায় ঢালা (রাসূল সা. এর আমল অনুসারে)।

জমজমের পানি পান করার দোয়া

জমজমের পানি শুধু শরীরের পিপাসা নিবারণের জন্য নয়, বরং এটি আত্মার প্রশান্তি ও দোয়া কবুলের একটি মাধ্যম। সহিহ হাদীসে এসেছে; যে ব্যক্তি জমজমের পানি যে নিয়্যাতে পান করে, আল্লাহ তায়ালা সেই নিয়্যত পূর্ণ করে দেন।

তাই জমজমের পানি পান করার সময় মনোযোগ সহকারে দোয়া করা সুন্নাহ ও অত্যন্ত মুবারক আমল। নবী করিম (সা.)-এর সাহাবীগণও বিশেষ দোয়া পড়ে জমজমের পানি পান করতেন।

  • যমযমের পানি পানের সময় ইবনু আব্বাস (রাঃ) যে দোয়া পড়তেন — “اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا، وَرِزْقًا وَاسِعًا، وَشِفَاءً مِنْ كُلِّ دَاءٍ” “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে উপকারী জ্ঞান, প্রশস্ত রিজিক ও সকল রোগ থেকে আরোগ্য চাই।” (আহমদ, আল-মুসনাদ, ৩/৩৯৪)
  • রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন — “مَاءُ زَمْزَمَ لِمَا شُرِبَ لَهُ” “যমযমের পানি যে নিয়্যাতে পান করা হয়, আল্লাহ তা পূর্ণ করে দেন।” (ইবন মাজাহ, ২/৩০৬২)
  • ইমাম শাওকানী (রহ.) বলেন, “যমযমের পানি যে উদ্দেশ্যে পান করা হয় — দুনিয়াবি হোক বা আখিরাতের — আল্লাহ তা কবুল করেন।” (নাইলুল আওতার, ৫/১০৫)

প্রাচীন আলেমদের দোয়া ও উদ্দেশ্য

  • তাবেঈ আব্দুল্লাহ ইবনু মুবারক (রহ.) জমজমের পানি পান করার সময় দোয়া করতেন — “اللهم أني أشربه لعطش يوم القيامة” “হে আল্লাহ! আমি তা পান করছি কিয়ামতের দিনের পিপাসা নিবারণের জন্য।” (তারিখ দিমাশক, ৩২/৪৩৬)
  • আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহ.) উল্লেখ করেন — হাফিজ ইবনু হাযর আসকালানি (রহ.) জমজমের পানি পান করে দোয়া করেছিলেন যেন তাঁর স্মৃতিশক্তি ইমাম জাহাবীর মতো হয়। পরে তাঁর স্মৃতিশক্তি সেই স্তরে পৌঁছেছিল — বরং আরও উন্নত হয়েছিল। (তাবাকাতুল হুফফাজ, ১/৫২২)

জমজমের পানি পানের গুরুত্ব ও ফজিলত

জমজমের পানি হজ ও উমরাহ পালনকারীদের জন্য বিশেষ বরকতময় পানীয়, এবং সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য এক মহান নিয়ামত।

  • হজরত ইবনে আব্বাস রাঃ বর্ণনা করেন, “عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ شَرِبَ النَّبِيُّ ﷺ مِنْ زَمْزَمَ وَهُوَ قَائِمٌ” “নবীজি (সা.) জমজম কূপ থেকে দাঁড়িয়ে পানি পান করেছেন।” (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৫৫৬)
  • হজরত আবু জর (রা.) বর্ণনা করেন, “قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ مَاءُ زَمْزَمَ مُبَارَكٌ طَعَامُ طُعْمٍ” “জমজমের পানি বরকতময়, এটি ক্ষুধার জন্য খাদ্য ও তৃষ্ণার জন্য পানীয়।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৪৭৩)
  • হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে পাত্র ও মশকে করে জমজমের পানি বহন করতেন, তা অসুস্থদের ওপর ছিটিয়ে দিতেন এবং তাদের পান করাতেন।” (সুনানে তিরমিজি)
  • মুসনাদে তায়ালুসির বর্ধিত বর্ণনায় উল্লেখ আছে — “এটি রোগীর জন্য ওষুধও বটে।”

উপরের হাদিস থেকে বোঝা যায়, জমজমের পানি বহন করা জায়েজ, এবং দূরে অবস্থানকারীদের জমজমের পানি পান করানো রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সুন্দর এক সুন্নাহ।

জমজমের পানি কী দাঁড়িয়ে না বসে পান করতে হয়?

পানি পান করার সাধারণ সুন্নাহ হলো বসে পানি পান করা। তবে নবী করিম (সা.) জমজমের পানি দাঁড়িয়ে পান করেছেন।

  • ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত — “عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ شَرِبَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم قَائِمًا مِنْ زَمْزَمَ” “নবী (সা.) জমজম কূপ থেকে দাঁড়িয়ে পানি পান করেছেন।” (বুখারী, ৫২৯৪)
  • এছাড়াও ওপর এক হাদিসে বর্ণিত আছে — “عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم شَرِبَ مِنْ زَمْزَمَ مِنْ دَلْوٍ مِنْهَا وَهُوَ قَائِمٌ” “নবী (সা.) জমজমের পানি বালতি থেকে দাঁড়িয়ে পান করেছেন।” (মুসলিম, ৫১০৯)

তাই আলেমদের অনেকে মনে করেন, জমজমের পানি দাঁড়িয়ে পান করা উত্তম, তবে বসে পান করাও জায়েজ।

হিজাজ হজ উমরাহ লিমিটেড । আপনার বিশ্বস্ত হজ ও উমরাহ সঙ্গী

বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য হিজাজ হজ উমরাহ লিমিটেড একটি নির্ভরযোগ্য ও অনুমোদিত হজ ও উমরাহ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। আমরা দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবের সরকারি অনুমোদিত ট্রাভেল পার্টনার হিসেবে হাজী ও ওমরাহ যাত্রীদের পূর্ণাঙ্গ সেবা দিয়ে আসছি।

আপনার পবিত্র হজ ও উমরাহ যাত্রা যেন সহজ, আরামদায়ক এবং ইবাদতপূর্ণ হয় সেটিই আমাদের মূল লক্ষ্য। আমাদের থেকে আপনি পাবেন বিভিন্ন বাজেট ও সুবিধানুযায়ী হজ এবং উমরাহ প্যাকেজ, যেখানে অন্তর্ভুক্ত আছে—

জমজমের পানি সম্পর্কে প্রায়শ জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

জমজম কূপ পবিত্র কাবা শরিফের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে অবস্থিত। এটি ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর পুত্র ইসমাঈল (আ.)-এর যুগে হযরত হাজেরা (আ.)-এর দোয়ার বরকতে সৃষ্টি হয়। সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত কূপটি কখনো শুকায়নি, যা আল্লাহর অলৌকিক এক নিদর্শন।

জমজমের পানি দাঁড়িয়ে পান করা উত্তম (মুস্তাহাব)। ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন — “شَرِبَ النَّبِيُّ ﷺ قَائِمًا مِنْ زَمْزَمَ” “নবী করিম (সা.) জমজম কূপ থেকে দাঁড়িয়ে পানি পান করেছেন।” (সহিহ বুখারি, হাদীস : ১৫৫৬)।

তবে বসে পান করাও জায়েজ। অন্যান্য পানীয় সাধারণভাবে বসে পান করা সুন্নত হলেও, জমজমের পানি দাঁড়িয়ে পান করা নবীজির বিশেষ আমল হিসেবে গণ্য।

সহিহ হাদীসে ইবনু আব্বাস (রা.) জমজমের পানি পানের পাঁচটি আদব বা সুন্নত উল্লেখ করেছেন —

  • কিবলামুখী হয়ে পান করা
  • “বিসমিল্লাহ” বলা
  • তিন নিশ্বাসে ধীরে ধীরে পান করা
  • পেটভরে পান করা
  • শেষে “আলহামদুলিল্লাহ” বলা

(সূত্র: ইবন মাজাহ, হাদীস ৩০৬১)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন — “مَاءُ زَمْزَمَ لِمَا شُرِبَ لَهُ” “জমজমের পানি যে নিয়্যাতে পান করা হয়, আল্লাহ তা পূর্ণ করে দেন।” (ইবন মাজাহ, ৩০৬২)।

অর্থাৎ, কেউ যদি জমজমের পানি শেফা, জ্ঞান, রিজিক বা আখিরাতের কল্যাণের নিয়্যতে পান করে — আল্লাহ তায়ালা সেই নিয়্যত কবুল করেন। এটি বরকত, আত্মিক শান্তি ও শারীরিক উপকারের উৎস।

হ্যাঁ, জমজমের পানি দিয়ে দেহে ছিটানো বা গোসল করা যায়, তবে সম্মান ও বিনয় বজায় রেখে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) অসুস্থদের ওপর জমজমের পানি ছিটিয়ে দিতেন এবং তাদের পান করাতেন (সুনানে তিরমিজি)।

তবে বাথরুম বা অপবিত্র স্থানে জমজমের পানি ব্যবহার করা উচিত নয়, কারণ এটি বরকতময় পানি।

হ্যাঁ, পিরিয়ড বা মাসিকের সময় মহিলারা জমজমের পানি স্পর্শ ও পান করতে পারেন। ইসলামি শরিয়তে কোনো সহিহ দলিল নেই যা এ অবস্থায় জমজমের পানি স্পর্শ করা বা পান করা নিষিদ্ধ করেছে। কেবল নামাজ বা কুরআন পাঠ থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন, কিন্তু জমজমের পানি পান করা অনুমোদিত ও সওয়াবের কাজ।

হ্যাঁ, এটি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত আমল। ইবনু আব্বাস (রা.)-এর বর্ণনা অনুযায়ী নবী করিম (সা.) জমজম কূপ থেকে দাঁড়িয়ে পানি পান করেছেন (সহিহ মুসলিম, ২০২৭)। তবে বাধ্যতামূলক নয়; বসে পান করলেও গুনাহ নেই।

“اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا، وَرِزْقًا وَاسِعًا، وَشِفَاءً مِنْ كُلِّ دَاءٍ” বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিআন, ওয়া রিজকান ওয়াসিআন, ওয়া শিফাআন মিন কুল্লি দা। অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে উপকারী জ্ঞান, প্রশস্ত রিজিক এবং সকল রোগ থেকে আরোগ্য চাই। (সূত্র: মুসনাদে আহমদ, ৩/৩৯৪)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জমজমের পানি দাঁড়িয়ে পান করেছেন। আলেমদের মতে, এটি নবীজির বিশেষ সম্মানসূচক আমল, কারণ জমজমের পানি অন্য সব পানির চেয়ে বরকতময়। তাই এটি দাঁড়িয়ে পান করা নবীজির অনুসরণ ও কৃতজ্ঞতার প্রকাশ, যদিও বসে পান করাও বৈধ।

Apply for an Umrah visa and experience the hassle-free journey to the city of Makkah.

Arrow