বায়তুল্লাহ

ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ: হজ্জ ও ওমরার ইতিহাস

ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মৌলিক স্তম্ভের মধ্যে হজ্জ অন্যতম। আর পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে পবিত্র ও বরকতপূর্ণ সফর হিসেবে বিবেচনা করা হয় যে সফরকে তা হচ্ছে- ওমরাহ । হজ্জ ও ওমরার গুরুত্ব অনুধাবন করতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে সৃষ্টির একেবারে সূচনালগ্নে। তাই হজ্জ ও ওমরা পালনের আগে চলুন ঘুরে আসি হজ্জ ও ওমরার ইতিহাসের পাতায়।

হজ্জ ও ওমরার ইতিহাসে যে সকল নাবি-রাসূলদের নাম অন্তর্ভূক্ত, তাদের মধ্যে রয়েছে আদম আ. যিনি বায়তুল্লাহ বা আল্লাহর ঘর নির্মাণ করেন,পরবর্তীতে আরও বেশ কয়েকজন নাবি এই ঘর পুনঃনির্মান করেন, যেমন: নূহ আ. ইব্রাহীম আ, ও ইসমাঈল আ.।

আরাফার ময়দান

হজ্জ কি?

হজ্জ একটি আরবি শব্দ। যার শাব্দিক অর্থ নিয়ত করা, দর্শন করা, সংকল্প করা, গমন করা, ইচ্ছা করা, প্রতিজ্ঞা করা ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায় নির্দিষ্ট দিনে নিয়তসহ ইহরামরত অবস্থায় আরাফার ময়দানে অবস্থান করা এবং বায়তুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করাকেই হজ্জ বলে।

অন্য দিকে , জিলহাজ্জ মাসের ৯ তারিখ ইহরাম বেঁধে আরাফাতের মাঠে অবস্থানসহ কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে নির্ধারিত কয়েকটি আমল যথাযথভাবে আদায় করে কাবা গৃহ তাওয়াফ করাকে হজ্জ বলে।

কাবাঘর জিয়ারত

ওমরাহ কি?

ওমরাহ শব্দের অর্থ জিয়ারত করা, পরিদর্শন করা ও সাক্ষাৎ করা। পবিত্র কাবাগৃহের জিয়ারতই মূলত ওমরাহ। ইসলামের ভাষায় পবিত্র হজ্জের সময় ছাড়া অন্য যেকোনো সময় পবিত্র কাবাঘরের তাওয়াফসহ নির্দিষ্ট কিছু কাজ করাকে ওমরাহ বলা হয়। আর এটিই পৃথিবীর একমাত্র ভ্রমণ যার জন্য আল্লাহর নিকট রয়েছে প্রতিদান ও বরকত।

কুরআন ও হাদিসের আলোকে হজ্জ ও ওমরার ইতিহাস

হজ্জ ও ওমরার ইতিহাস মূলত কা’বা ঘর নির্মাণকে কেন্দ্র করেই, তাই বায়তুল্লাহ নির্মাণের ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করাই মূখ্য। সাধারণত কোনো কিছুর ইতিহাস, আমাদের সেই কাজের প্রতি অনুপ্রাণিত করে। ইতিহাস পাঠ করা হয় সেই বিষয়টি গভীরভাবে অনুধাবন করার জন্য। আজ আমরা কুরআন ও হাদিসের আলোকে জানতে চলেছি হজ্জ ও ওমরার সুদূরপ্রসারী ইতিহাস।

কা‘বা ঘর নির্মাণ ও সংস্কার হয়েছে একাধিকবার। কারও কারও মতে পাঁচবার। তবে বিশুদ্ধ মতে ইব্রাহীম আ. কা‘বা ঘরের নির্মাণ সম্পন্ন করেন।

  • আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা বলেন
    ‘‘এবং আমরা ইব্রাহীম ও ইসমাঈল-কে আদেশ দিয়েছিলাম যেন তারা আমার ঘরকে তাওয়াফকারীদের, ই‘তিকাফকারীদের, রুকু ও সাজদাহকারীদের জন্য পবিত্র করে রাখে’’। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১২৫]

    ‘‘নিশ্চয় মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে ইবাদত গৃহটি (কা‘বা) নির্মিত হয় সেটি বাক্কায় (মক্কায়) অবস্থিত। একে কল্যাণ ও বরকতময় করা হয়েছে এবং সৃষ্টিকুলের জন্য পথপ্রদর্শক করা হয়েছে’’। [সূরা-আলে ইমরান, আয়াত: ৯৬]

  • ইব্রাহীম ও ইসমাঈল আ. এর ঘটনা
    হজ্জ ও ওমরার ইতিহাস আলোচনায় কুরআন ও হাদিসে যে নামটি সবচেয়ে বেশি এসেছে তিনি হলেন আমাদের আদি পিতা ইব্রাহীম আ.। আল্লাহ তা‘আলা ইব্রাহীম আ. কে তার স্ত্রী হাজেরা ও পুত্র ইসমাঈল আ.কে জনমানব শূণ্য মরুময় পাথুরে মক্কা উপত্যকায় রেখে আসার নির্দেশ দেন -এটা ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ এক পরীক্ষা।

    খাবার শূণ্য উপত্যকায় পুত্র ইসমাঈল প্রচণ্ড পানির পিপাসায় ছটফট করতে শুরু করেন, প্রাণ যখন ওষ্ঠাগত, মা ‘হাজেরা পানির সন্ধানে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে ৭ বার ছুটাছুটি করেন। অতঃপর জিবরাঈল আ. এসে শিশু ইসমাঈলের জন্য সৃষ্টি করলেন সুপেয় পানির কূপ -যমযম। তারা আল্লাহর নির্দেশে পরবর্তীতে কা‘বা ঘরের পুণঃনির্মাণ কাজ শুরু করেন।

  • হজ্জের বিধান কুরবানির ইতিহাস
    আল্লাহ তায়ালা স্বপ্নে ইব্রাহীম আ. কে তার পুত্র ইসমাঈলকে যবেহ করতে বলেন, ইব্রাহীম আ. আদেশ পালনে উদ্যত হলে ঘটনাস্থলে পশু কুরাবানি হয়, সেই থেকে হজ্জের সাথে সাথে চলে এসছে এ নিয়ম, মুসলিম বিশ্বে যা ঈদুল আযহা বা কুরবানী ঈদ নামে পরিচিত।

  • যেভাবে রাসূল সা. হজ্জ ও ওমরা করতেন
    রাসূল সা. ও তার অনুসারীরা যেসব পথে ঘুরে হজ্জ পালন করেছেন, এর মধ্যে রয়েছে; কা‘বা তাওয়াফ করা, সাফা ও মারওয়া পর্বতের মধ্যে সা‘ঈ করা, মিনায় অবস্থান করা ও আরাফায় উকুফ করা এবং মুযদালিফায় রাত্রিযাপন করা, জামারাতে কংকর নিক্ষেপ করা এবং ইব্রাহীম আ. এর ত্যাগের স্মৃতিচারণ ও আল্লাহর স্মরণকে বুলন্দ করার জন্য পশু যবেহ করা।

ইব্রাহীম ও ইসমাঈল আ, এর কাছ থেকে চলে আসা রীতিনীতি স্মরনীয় করে রাখার জন্য, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা পবিত্র কুরআনে এসকল কর্মকান্ডকে হজ্জ নামে মুসলিমদের ফরয বিধান হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে দেন। হজ্জের সময় ছাড়া একই কাজ করাকে ওমরাহ বলা হয়।

হজ্জ ও ওমরার গুরুত্ব

কাবার চারদিকে তাওয়াফ

কুরআনের আলোকে হজ্জের গুরুত্ব :

সলাত, সিয়াম ও যাকাতের মত হজ্জ পালন করা মুসলিম সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের উপর ফরয করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

‘আর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ গৃহের হজ্জ করা ঐ ব্যক্তির উপর ফরয করা হলো, যার এখানে আসার সামর্থ্য রয়েছে। আর যে ব্যক্তি তা অস্বীকার করে (সে জেনে রাখুক যে,) আল্লাহ বিশ্বজগত থেকে মুখাপেক্ষীহীন’ [আলে ইমরান ৩:৯৭]।

“আর তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ ও ওমরাহ পূর্ণ কর। কিন্তু যদি তোমরা বাধাপ্রাপ্ত হও, তাহ’লে যা সহজলভ্য হয়, তাই কুরবানী কর’ [সূরা বাকারা ২:১৯৬]।

এ আয়াতটি হজ্জ ফরয হওয়ার পাশাপাশি ওমরাহ ফরয হওয়ারও দাবী রাখে, যে ব্যাপারে অধিকাংশ সাহাবি ও ওলামায়ে কেরাম অভিমত ব্যক্ত করেছেন।এটিই হজ্জ ফরয হওয়ার মূল দলীল।

হাদিসের আলোকে হজ্জের গুরুত্ব:

হজ্জের গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি হাদিস নিচে উল্লেখ করা হলো- ইবনু ওমর রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন,

রাসূল সা. বলেছেন, ‘ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপরে প্রতিষ্ঠিত (১) তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য প্রদান করা এ মর্মে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ সা. তার বান্দা ও রাসূল (২) সলাত কায়েম করা (৩) যাকাত প্রদান করা (৪) হজ্জ সম্পাদন করা ও (৫) রামাযানের সিয়াম পালন করা’।

তোমরা হজ্ব ও উমরার মাধ্যমে এই (বায়তুল্লাহ) গৃহের উপকার গ্রহণ কর। কেননা তা ইতিপূর্বে দু’বার ধ্বংস হয়েছে। তৃতীয়বারের পর উঠিয়ে নেওয়া হবে। [সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৫০৬; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৬৭১৮; মুসনাদে বাযযার, হাদীস : ১০৭২; মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস : ১৬৫২]

সারসংক্ষেপ

হজ্জ ও ওমরার হৃদয়স্পর্শী ইতিহাস এবং কুরআন ও হাদিসের আলোকে হজ্জ ও ওমরার গুরুত্ব অনুধাবন করার পর, যারা হজ্জ ও ওমরা করার ইচ্ছা পোষোণ করবেন, তাদের জন্য প্রয়োজন একটি বিশ্বস্ত হজ্জ ও ওমরা এজেন্সি। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এত বড় একটি পবিত্র কাজের দায়িত্ব সকল এজেন্সি সঠিকভাবে পালন করতে পারেন না। এজন্য সঠিকভাবে হজ্জ ও ওমরা পালনের এজেন্সি নির্বাচন করা জরুরি হয়ে পড়ে।

এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে, আপনার হজ্জ ও ওমরার যাত্রা নির্বিঘ্নে করতে ‘হিজাজ হজ্জ ও ওমরা কাফেলা’ এক অন্যতম বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান। যারা আপনার হজ্জ ও ওমরার মতো পূণ্যময় যাত্রায় আপনার পূণ্যময় সঙ্গী হতে পারে। ‘হিজাজ হজ্জ ও ওমরা কাফেলার’ মাধ্যমে পূর্ণ হোক আপনার হজ্জ ও ওমরা পালনের মনোবাসনা।

Apply for an Umrah visa and experience the hassle-free journey to the city of Makkah.

Arrow