ইহরামের কাপড় লাগ্যাজে থেকে গেলে কী করণীয়?

কেউ কেউ ভুলে লাগ্যাজে ইহরামের পোশাক রেখে দেয় কিংবা তার পক্ষে ব্যাগ থেকে কাপড় বের করা সম্ভব না হয়, এ ক্ষেত্রে সে তার পরিধেয় বস্ত্র খুলে চাদরের মতো করে গায়ে জড়িয়ে নিবে ও একটি লুঙ্গি পরে নেবে। যদি লুঙ্গি পরার সুযোগ না পায় তাহলে আপাতত পাজামা বা প্যান্ট পরেই লজ্জাস্থান ঢাকবে। তারপর যখন সুযোগ পাবে, পাজামা খুলে ইহরামের কাপড় পরে নেবে। এ জন্য তাকে কোন ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না। ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত,

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ بِعَرَفَاتٍ فَقَالَ مَنْ لَمْ يَجِدْ إِزَارًا فَلْيَلْبَسْ السَّرَاوِيلَ وَمَنْ لَمْ يَجِدْ نَعْلَيْنِ فَلْيَلْبَسْ خُفَّيْنِ

“তিনি নবী (সা.)—কে আরাফাতে বলতে শোনেন; যার অর্থাৎ যে মুহরিম চাদর না মিলে, সে যেনো পায়জামা পরিধান করে এবং যার চটি নেই, সে যেনো মোজা পরিধান করে।’’ [আন—নাসাঈ, আস—সুনান, ৫৩২৪]

ভুলবশত ইহরাম না বেঁধে মিকাত অতিক্রম করলে কী করণীয়?

হজ্জ ও উমরা আদায়কারির জন্য ইহরামের নিয়ত না করে মিকাত অতিক্রম করা জায়েয নয়। যদি কেউ ইহরাম না বেঁধে মিকাত অতিক্রম করে ভেতরে চলে আসে তার উচিত হবে মিকাতে ফিরে গিয়ে ইহরামের নিয়ত করা। এমতাবস্থায় তার ওপর ক্ষতিপূরণ হিসেবে ‘দম’ দেয়া আবশ্যক হবে না। যদি সে মিকাতে ফিরে না গিয়ে যেখানে আছে সেখান থেকে ইহরামের নিয়ত করে, তাহলে তার হজ্জ—উমরা হয়ে যাবে বটে তবে তার ওপর ‘দম’ দেয়া আবশ্যক হবে। কেননা সে অন্তরে হজ্জ বা উমরা অথবা উভয়টার ইচ্ছা রেখেই মিকাত অতিক্রম করেছে। ইবন আব্বাস (রা.) বলেন,

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ قَالَ مَنْ نَسِيَ مِنْ نُسُكِهِ شَيْئًا أَوْ تَرَكَهُ فَلْيُهْرِقْ دَمًا

‘কেউ যদি তার হজের কোন আমল ভুলে যায় বা ছেড়ে দেয় সে যেন পশু যবেহ করে।’ [মালিক, আল—মুআত্তা, ৯৩৮]

ইহরাম বাধাঁর পূর্বের ব্যবহৃত সুগন্ধির বিধান।

ইহরাম বাধাঁর পূর্বের ব্যবহৃত সুগন্ধির জন্য কী ইহরামের কোনো ক্ষতি হবে?

ইহরাম বাঁধার পর শরীরের কোন অংশে সুগন্ধির প্রভাব রয়ে গেলে তাতে কোন সমস্যা নেই। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সুগন্ধি তাঁর মাথা ও দাঁড়িতে অবশিষ্ট থাকতো। আইশা (রা.) বলেন,

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ كُنْتُ أُطَيِّبُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم بِأَطْيَبِ مَا يَجِدُ، حَتَّى أَجِدَ وَبِيصَ الطِّيبِ فِي رَأْسِهِ وَلِحْيَتِهِ

“আমি যত উৎকৃষ্ট খুশবু পেতাম, তা নবী (সা.) —কে লাগিয়ে দিতাম। এমন কি সে খুশবুর ঔজ্জ্বল্য তাঁর মাথায় ও দাড়িতে দেখতে পেতাম।’’ [বুখারী, আস—সহীহ, ৫৯২৩]

عَنِ الأَسْوَدِ، قَالَ قَالَتْ عَائِشَةُ رضى الله عنها كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى وَبِيصِ الْمِسْكِ فِي مَفْرِقِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ مُحْرِمٌ

“আইশা (রা.) বলেন, আমি যেনো রাসুলুল্লাহ (সা.)—এর সিথিতে তার ইহরামের অবস্থায় কস্তুরী চাকটিক্য দেখতে পাচ্ছি।” [মুসলিম, আস—সহীহ, ২৭১০]

হজ্জে ভুলবশত ইহরাম খুললে সে অবস্থায় শরীয়াতের বিধান

কোনো কারণে ইহরামের কাপড় অপবিত্র হলে কি করণীয়?

ইহরামের কাপড় কোন কারণে অপবিত্র হয়ে গেলে তা ধুয়ে পরিস্কার করতে পারে। মুহরিম অপবিত্র কাপড় পরিবর্তন করে পবিত্র ইহরামের কাপড় পরতে পারে।

[মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৭/৫৭; ফাতাওয়া নূরুন আলাদ—দারব, ১৭/২৬৬]

কেননা, হজ্জ কিংবা উমরার ইহরামকারীর জন্য এক ইহরামের কাপড় খুলে অন্য ইহরামের কাপড় পরিধান করা জায়েয আছে। এতে করে হজ্জের কিংবা উমরার ইহরামের উপর কোনো প্রভাব পড়বে না। [ফাতাওয়া আল—লাজনা আদ—দায়িমা ১১/১৮৫]

কোন ব্যক্তি উমরাহ বা হজ্জের নিয়তে ইহরাম পরিধান করার পর ভুলবশত ইহরাম খুললে সে অবস্থায় শরীয়াতের বিধান কী?

উমরা না করে ইহরাম খুলা যাবে না। উমরা না করে ইহরাম খুলে ফেললে কাফ্ফারা দিতে হবে। তবে ভুলবশত বা অজ্ঞাতসারে ইহরাম খুলে ফেললে মনে হওয়া মাত্র সাধারণ পোশাক খুলে ফেলবে এবং পুনরায় ইহরামের কাপড় পরিধান করবে। এ জন্য মুহরিমকে কিছু দিতে হবে না। তবে স্মরণ হওয়ার পর বিলম্ব করলে দম দিতে হবে।

ইহরাম অবস্হায় ক্ষতস্থান থেকে যদি রক্ত বের হয়, তাহলে কি পুনরায় ইহরাম করতে হবে?

না। ইহরাম অবস্থায় ক্ষতস্থান থেকে যদি রক্ত বের হয়, তাহলে পুনরায় ইহরাম করতে হবে না। কেননা, নবী (সা.) মুহরিম অবস্থায় হিজামাহ করিয়েছেন। এতে রক্ত বের করে দিলেও ইহরামের কোনো ক্ষতি হয়নি। ইবন আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত,

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنهما: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‌احْتَجَمَ، ‌وَهُوَ ‌مُحْرِمٌ

“নিশ্চয়—ই রাসূলুল্লাহ (সা.) হিজামাহ করিয়েছেন; অথচ তিনি ছিলেন মুহরিম।” [আবূ হানিফা, আল—মুসনাদ, ২০]

ইবন উসাইমিন (র.) বলেন,

إذا كان الإنسان معتمرًا وكان به جرح فخرج منه دم، فإن ذلك لا يؤثر على عمرته شيئًا، وكذلك لو كان حاجًا وكان به جرح فخرج منه دم، فإن ذلك لا يؤثر في حجه شيئًا، وكذلك لو جُرح حال الإحرام، فخرج منه دم فإن ذلك لا يؤثر في نسكه شيئًا، وقد ثبت عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه احتجم وهو محرم، ولم يؤثر ذلك على نسكه شيئًا.

“যদি কোন ব্যক্তি উমরা পালন করা অবস্থায় তার কোনো ক্ষত থেকে রক্ত বের হয়, তাহলে তা তার উমরাকে তা কোনভাবেই প্রভাবিত করে না। অনুরূপভাবে যদি সে হজ্জে থাকে এবং সে আঘাত পায় ও তা থেকে রক্ত বের হয় তবে তা কোনভাবে তার হজ্জকে প্রভাবিত করবে না। একইভাবে ইহরাম অবস্থায় আহত হলে এবং তা থেকে রক্ত বের হলে, তা তার হজ্জ—উমরার আচার—অনুষ্ঠানকে প্রভাবিত করবে না। নবী (সা.) থেকে প্রমাণিত তিনি ইহরাম অবস্থায় সিঙ্গা করেছিলেন, কিন্তু এটি তার আচার—অনুষ্ঠানকে কোনভাবেই বাধাগ্রন্ত করেনি।” [ইবন উসাইমিন, ফাতওয়া আশ—শাবকাহ আল—ইসলামিয়্যাহ, ১১/১৯৩৭৪]

এহরাম খুলে টয়লেটে গেলে আবার কি মীকাত গিয়ে এহরাম বাঁধতে হবে?

না। ইহরাম খুলে টয়লেটে গেলে ইহরাম নষ্ট হবে না। সুতরাং মিকাতে গিয়ে আবার ইহরাম বাধঁতে হবে না।

Apply for an Umrah visa and experience the hassle-free journey to the city of Makkah.

Arrow