স্যান্ডেল পড়ে উমরাহ করা যায় কি —না?

আশা করি প্রশ্নকারী সেন্ডেল বলতে দুই ফিতাবিশিষ্ট জুতা উদ্দেশ্য করেছেন।

সুন্নাহ হলো পরুষ ব্যক্তি দুটো জুতা পরে ইহরাম করা। ইবন উমর (রা.) হতে বর্ণিত নবী (সা.) বলেন বলেন:

لِيُحرِمَ أحدُكم في إزارٍ ورداءٍ ونعْلَينِ

“তোমাদের কেউ যেনো, লুঙ্গি, চাদর ও জুতা পরে ইহরাম করে।”। [আহমদ, আল—মুসনাদ, ৪৮৯৯]

আরবী النعال শব্দের অর্থ الحذاء বা জুতা। ফিরোজাবাদী বলেন: ما وُقيت به القدم من الأرض অর্থাৎ “যা দিয়ে ভূপৃষ্ঠ থেকে পা—কে রক্ষা করা হয়”। [(ফিরোজাবাদী, আল—কামুস আল—মুহীত, ১৩৭৪)] সুতরাং যেটাকে জুতা বলা যায় সেটা পরে ইহরাম বাঁধা জায়েয হবে। ফিতার অস্তিত্ব ধর্তব্য নয়।

উত্তম হলো দুটো জুতা পরে ইহরাম করা; যাতে করে ব্যক্তি কাঁটা বা নুড়ি পাথর, গরম ও ঠান্ডা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে। আর যদি জুতা পরে ইহরাম করতে না পারে তাহলে কোনো অসুবিধা নেই। [মুহাম্মদ ইবন আব্দুল আযীয, ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা, ২/২৩২]

ইহরামে সেলাইকৃত ব্যাগ বহনের বিধিনিষেধ

ইহরাম অবস্থায় সেলাইকৃত টাকার বা জুতার ব্যাগ সাথে থাকতে পারবে কি—না?

ইহরাম অবস্থায় সেলাইযুক্ত ব্যাগ ব্যবহার করাও নিষিদ্ধ নয়। হিশাম ইবন উরওয়া (রহ.) বলেন,

عن هشام بن عروة عن أبيه أنه كان لا يرى بأسًا أن يلبس المحرم الهميان (إن) كان يحرز فيه نفقته

অর্থাৎ “তার পিতা বিখ্যাত তাবিঈ উরওয়া (রহ.) মুহরিমের জন্য টাকা—পয়সা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রক্ষার উদ্দেশে ব্যাগ ব্যবহার করা বৈধ মনে করতেন।” [ইবন আবি শাইবা, আল—মুসান্নাফ, ১৬১৬৩]

আরবী ‘আল—হিময়ান‘ (الهميان) বলতে (كيس تجعل فيه النقود ويشد على الوسط) এমন থলে বুঝায় যাতে টাকা—পয়সা রাখা হয় এবং তা কোমরে ঝুলানো হয়।

ইহরাম অবস্থায় সেলাইকৃত ছাতা ব্যবহার করা জায়েজ কী?

সূর্যের উষ্ণতা কিংবা বৃষ্টি থেকে সুরক্ষার উদ্দেশ্যে ছাতা ব্যবহার করা জায়েজ। অনুরূপ কাজ হাদীসে মাথা ঢেকে রাখার নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়বে না। বস্তুত তা মাথা ঢাকা নয়; বরং রোদ—বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আশ্রয়। বিদায় হজ্জে রাসূলুল্লাহ (সা.) অনুরূপ ছায়া গ্রহণের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে।

عَنْ أُمِّ الْحُصَيْنِ تَقُولُ: حَجَجْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حَجَّةَ الْوَدَاعِ. فَرَأَيْتُهُ حِينَ رَمَى جَمْرَةَ الْعَقَبَةِ وَانْصَرَفَ وَهُوَ عَلَى رَاحِلَتِهِ. وَمَعَهُ بِلَالٌ وَأُسَامَةُ. أَحَدُهُمَا يَقُودُ بِهِ رَاحِلَتَهُ. وَالْآخَرُ رَافِعٌ ثَوْبَهُ عَلَى رَأْسِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنَ الشَّمْسِ.

“উম্মুল হুসায়ন (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাথে বিদায় হাজ্জ করেছি এবং আমি দেখেছি, তিনি জামরাতুল আকাবায় পাথর নিক্ষেপ করে সওয়ারীতে চড়ে ফিরে আসেন এবং তার সাথে ছিলেন বিলাল ও উসামা (রা.)। তাদের একজন উটের লাগাম ধরে তা টেনে নিচ্ছিলেন এবং অপরজন সূর্যের তাপের কারণে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর মাথার উপর কাপড় ধরে রাখছিলেন।” [মুসলিম, আস—সহীহ, ১২৯৮]

উক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইহরাম অবস্থায় হালাল হওয়ার পূর্বে কাপড় দিয়ে ছায়া গ্রহণ করেছেন। ফলে সূর্যের উষ্ণতা কিংবা বৃষ্টি থেকে সুরক্ষার উদ্দেশ্যে ছাতা ব্যবহার করা জায়েজ।

একই সফরে দ্বিতীয়/তৃতীয় উমরার জন্য কোথায় থেকে ইহরাম বাধতে হবে?

সবচেয়ে নিকটবর্তী মিকাত ‘তানঈম‘ (التنعيم) যা ‘আইশা মসজিদ‘ (مسجد عائشة) নামে পরিচিত। বিদায়হজ্জের সময় আম্মাজান আইশা (রা.) মক্কা থেকে তানঈম গিয়ে উমরার জন্য ইহরাম করে এসেছেন।

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَ مَعَهَا أَخَاهَا عَبْدَ الرَّحْمَنِ فَأَعْمَرَهَا مِنْ التَّنْعِيمِ وَحَمَلَهَا عَلَى قَتَبٍ

“আইশা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, নবী (সা.) এর সাথে তার ভাই আবদুর রহমান (রা.) কে প্রেরণ করেন। তিনি আইশাকে ছোট্র একটি হাওদায় বসিয়ে তান’ঈম নামক স্থান থেকে উমারা করাতে নিয়ে যান।” [বুখারী, আস—সহীহ, ১৫১৬

পরবর্তী কাছাকাছি দূরত্বে রয়েছে ‘আল—জিআরানা’ (الجعرانة)। হুনাইন যুদ্ধের সময় নবী (সা.) এ স্থান থেকে ইহরাম করে উমরা পালন করেন। তাই এখানকার মসজিদটিও ‘মাসজিদু নবী’ (مسجد النبي) নামে পরিচিত।

তবে কেউ যদি কোনো প্রয়োজনে মক্কা থেকে বের হয়ে তায়িফ, জিদ্দা কিংবা মদীনায় আসেন এবং মক্কায় এসে আবার উমরা করতে চায় তবে যথাক্রমে ‘মাসজিদ সায়িলুল কাবির’ (কারনুল মানাযিল), ‘মাসজিদ আশ—শুমাইসি’ (হুদাইবিয়া), ‘আবারু আলী’ (যূল হুলাইফা) থেকে ইহরাম বাঁধতে পারেন।

উমরার ইহরাম কখন পড়তে হয়?

উমরা পালনের নিয়তে যারা মক্কার উদ্দেশে গমন করেন, তাদের মিকাত (নির্ধারিত স্থান) অতিক্রম করার আগে ইহরামের কাপড় পরে নিতে হয়। ইহরাম বাঁধার স্থানকে মিকাত বলে। উমরার জন্য নির্ধারিত স্থান অতিক্রম করার পূর্বে ইহরাম বাঁধা ফরজ। ইহরাম না পরে মিকাত অতিক্রম করা জায়েজ নয়। সুতরাং নির্দিষ্ট স্থান অতিক্রম করার পূর্বে ইহরাম না বাঁধলে উমরা আদায় হবে না। তাই উমরা পালনকারীদের জন্য নির্দিষ্ট স্থান থেকেই ফরজ কাজ ইহরাম বাঁধতে হয়। অঞ্চলভেদে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইহরামের জন্য পাঁচটি স্থানকে ইহরাম বাধাঁর স্থান হিসেবে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। ইবন আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত,

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَقَّتَ لأَهْلِ الْمَدِينَةِ ذَا الْحُلَيْفَةِ وَلأَهْلِ الشَّأْمِ الْجُحْفَةَ وَلأَهْلِ نَجْدٍ قَرْنَ الْمَنَازِلِ وَلأَهْلِ الْيَمَنِ يَلَمْلَمَ هُنَّ لأَهْلِهِنَّ وَلِكُلِّ آتٍ أَتَى عَلَيْهِنَّ مِنْ غَيْرِهِمْ مِمَّنْ أَرَادَ الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ فَمَنْ كَانَ دُونَ ذَلِكَ فَمِنْ حَيْثُ أَنْشَأَ حَتَّى أَهْلُ مَكَّةَ مِنْ مَكَّةَ

উমরার জন্য ইহরামের নিয়ম

“নবী (সা.) মদীনাবাসীদের জন্য যুল—হুলাইফা, সিরিয়াবাসীদের জন্য জুহ্ফা, নাজদবাসীদের জন্য কারনুল মানাযিল ও ইয়ামানবাসীদের জন্য ইয়ালামলাম মীকাত নির্ধারণ করেছেন। উক্ত মীকাতসমূহ হাজ্জ ও ‘উমরাহ’র উদ্দেশে আগমনকারী সে স্থানের অধিবাসীদের জন্য এবং অন্য কোন এলাকার লোক ঐ সীমানা দিয়ে অতিক্রম করবে তাদের জন্যও। এছাড়াও যারা মীকাতের ভিতরের অধিবাসী তারা যেখান হতে সফর আরম্ভ করবে সেখান হতেই (ইহরাম আরম্ভ করবে) এমন কি মক্কাবাসীগণ মক্কা হতেই।” [বুখারী, আস—সহীহ, ১৫৩০]

রাসুলুল্লাহ (সা.) ঐ অঞ্চলবাসীর জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। ঐ অঞ্চলের লোক ছাড়া যারা অন্যান্য স্থান থেকে এ মিকাতগুলো অতিক্রম করে বাইতুল্লায় আসবে, তাদের জন্যও এগুলো ইহরাম বাধাঁর স্থান। যারা বিমানযোগে উমরা পালনে মক্কায় আসবেন, আকাশ পথে যে মিকাত পড়ে তা অতিক্রম করার পূর্বে ইহরাম বাধঁতে হবে। তবে সেক্ষেত্রে তারা রওয়ানার পূর্বেই দেশ থেকে ইহরাম বেঁধে রওয়ানা হতে পারেন।

ইহরাম বাধাঁর স্থানগুলো কী কী?

হাদীসে ইহরাম বাধাঁর ৫ (পাঁচ) টি স্থানের উল্লেখ রয়েছে। এ গুলোকে মিকাত (ميقات) বলা হয়।

  • যুল—হুলাইফা (ذو الحليفة): মদিনাবাসী ও মদিনার পথে আগমনকারীদের জন্য মিকাত। মসজিদ নববীর দক্ষিণে ৭ কি.মি. এবং মক্কা থেকে উত্তরে ৪২০ কি.মি. দূরত্বে অবস্থিত বর্তমানে স্থানটির নাম ‘আবইয়ারে আলি’ বা ‘বীরে আলি’ নামে পরিচিত। বাংলাদেশ থেকে যারা আগে মদিনায় যাবে, তাঁরা ‘জুল—হুলাইফা’ থেকে ইহরাম বাঁধবেন।
  • আল—জুহফা (الجحفة): সিরিয়া, মিসর ও মরক্কোর অধিবাসী ও সে পথে আগমনকারীদের জন্য ইহরাম বাঁধার স্থান ‘আল—জুহফা’। মক্কা থেকে ২০৪ কি.মি. দূরত্বে অবস্থিত স্থানটি বর্তমান নাম ‘আল—রাবিগ’ নামে পরিচিত।
  • কারনুল মানাযিল (قرن المنازل): নজদবাসী ও সে দিক থেকে আগতদের জন্য ইহরামের স্থান। মক্কা থেকে ৭৫ কি.মি. দূরত্বে অবস্থিত স্থানটির বর্তমান নাম ‘আস—সায়িল আল—কাবির’ (السائل الكبير)। রাজধানী রিয়াদ থেকে তায়িফ হয়ে যারা মক্কায় আসেন কিংবা মক্কা থেকে তায়িফে করতে যাওয়া হাজ্জীগণ এখান থেকে উমরার ইহরাম বাঁধেন।
  • ইয়ালামলাম (يلملم): ইয়ামানবাসী ও ঐ দিক থেকে আগতের জন্য ইহরামের নির্ধারিত স্থান ইয়ালামলাম পাহাড়। মক্কা থেকে ১২০ কি.মি. দূরত্বে অবস্থিত স্থানটি বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান থেকে জলযানের হজযাত্রীদের জন্য মিকাত।
  • যাতু ইরক (ذات عرق): ইরাকবাসী ও সে পথে আসা হজ্জযাত্রীদের ইহরাম বাধাঁর স্থান। মক্কা থেকে পূর্ব দিকে ১০০ কি.মি. দূরত্বে স্থানটি অবস্থিত। এটি প্রাচ্যবাসী তথা ইরাক, ইরান এবং এর পরবর্তী দেশগুলোর অধিবাসীদের মিকাত। বর্তমানে এ মীকাতটি পরিত্যক্ত। কারণ ঐ পথে বর্তমানে কোন রাস্তা নেই। স্থল পথে আসা পূর্বাঞ্চলীয় হাজীগণ বর্তমানে সাইলুল কাবীর অথবা যুল—হুলাইফা থেকে ইহরাম বাঁধেন।

রাসুলুল্লাহ (সা.) ঐ অঞ্চলবাসীর জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। ইবন আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত,

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَقَّتَ لأَهْلِ الْمَدِينَةِ ذَا الْحُلَيْفَةِ وَلأَهْلِ الشَّأْمِ الْجُحْفَةَ وَلأَهْلِ نَجْدٍ قَرْنَ الْمَنَازِلِ وَلأَهْلِ الْيَمَنِ يَلَمْلَمَ هُنَّ لأَهْلِهِنَّ وَلِكُلِّ آتٍ أَتَى عَلَيْهِنَّ مِنْ غَيْرِهِمْ مِمَّنْ أَرَادَ الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ فَمَنْ كَانَ دُونَ ذَلِكَ فَمِنْ حَيْثُ أَنْشَأَ حَتَّى أَهْلُ مَكَّةَ مِنْ مَكَّةَ

“নবী (সা.) মদীনাবাসীদের জন্য যুল—হুলাইফা, সিরিয়াবাসীদের জন্য জুহ্ফা, নাজদবাসীদের জন্য কারনুল মানাযিল ও ইয়ামানবাসীদের জন্য ইয়ালামলাম মীকাত নির্ধারণ করেছেন। উক্ত মীকাতসমূহ হাজ্জ ও ‘উমরাহ’র উদ্দেশে আগমনকারী সে স্থানের অধিবাসীদের জন্য এবং অন্য কোন এলাকার লোক ঐ সীমানা দিয়ে অতিক্রম করবে তাদের জন্যও। এছাড়াও যারা মীকাতের ভিতরের অধিবাসী তারা যেখান হতে সফর আরম্ভ করবে সেখান হতেই (ইহরাম আরম্ভ করবে) এমন কি মক্কাবাসীগণ মক্কা হতেই।” [বুখারী, আস—সহীহ, ১৫৩০]

ঐ অঞ্চলের লোক ছাড়া যারা অন্যান্য স্থান থেকে এ মিকাতগুলো অতিক্রম করে বাইতুল্লায় আসবে, তাদের জন্যও এগুলো ইহরাম বাধাঁর স্থান। যারা বিমানযোগে উমরা পালনে মক্কায় আসবেন, আকাশ পথে যে মিকাত পড়ে তা অতিক্রম করার পূর্বে ইহরাম বাধঁতে হবে। তবে সেক্ষেত্রে তারা রওয়ানার পূর্বেই দেশ থেকে ইহরাম বেঁধে রওয়ানা হতে পারেন।

ইহরাম বাঁধার প্রস্তুতিমূলক কোনো সুন্নাত আছে কী?

ইহরাম বাঁধার পূবে পালনীয় কিছু সুন্নাত রয়েছে:

  • নখ কাটা, গোঁফ ছাঁটা, বগল ও নাভির নিচের চুল পরিষ্কার করা। আবূ হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত,

    عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ الْفِطْرَةُ خَمْسٌ الْخِتَانُ، وَالاِسْتِحْدَادُ، وَنَتْفُ الإِبْطِ، وَقَصُّ الشَّارِبِ، وَتَقْلِيمُ الأَظْفَارِ ‏"‏‏.‏

    ‘নবী (সা.) বলেছেন, মানুষের স্বভাবগত বিষয় হলো পাঁচটি: খাতনা করা, নাভির নীচের পশম কামানো, বগলের পশম উপড়ানো, গোঁফ কাটা এবং (অতিরিক্ত) নখ কাটা। [বুখারী, আস—সহীহ, ৫৮৬০]

    ফিকহবিদগণ বলেছেন, এই আমলগুলো ইবাদতের মনোরম পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক। আনাস রা. বলেন,

    عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ وَقَّتَ لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي قَصِّ الشَّارِبِ وَتَقْلِيمِ الأَظْفَارِ وَحَلْقِ الْعَانَةِ وَنَتْفِ الإِبْطِ أَنْ لاَ نَتْرُكَ أَكْثَرَ مِنْ أَرْبَعِينَ يَوْمًا ‏

    “আনাস ইবনু মালিক (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের জন্য গোঁফ ছাঁটা, নখ কাটা, নাভীর নিম্নাংশের লোম কামানো এবং বগলের লোম উপড়ে ফেলার জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে এমনভাবে যে, তা যেনো চল্লিশ দিনের বেশি রেখে না দেয়া হয়।” [তিরমিজী, আস—সুনান, ২৭৫৯]

  • গোসল করা: যায়িদ ইবন সাবিত (রা.) থেকে বর্ণিত,

    عَنْ زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّهُ رَأَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم تَجَرَّدَ لإِهْلاَلِهِ وَاغْتَسَلَ

    “তিনি দেখেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইহরামের উদ্দেশ্যে (সিলাই করা) পোশাক খুলে ফেলেছেন ও গোসল করেছেন।’’ [তিরমিজী, আস—সুনান, ৮৩২]

    এই গোসল পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য, এমনকি নিফাস ও হায়েযবতীর জন্যও সুন্নত। রাসূলুল্লাহ (সা.) নারী সাহাবী আসমা বিনত উমাইস (রা.)—কে যুল—হুলাইফায় সন্তান প্রসবের পর বলেন,

    فَأَتَيْنَا ذَا الْحُلَيْفَةِ فَوَلَدَتْ أَسْمَاءُ بِنْتُ عُمَيْسٍ مُحَمَّدَ بْنَ أَبِي بَكْرٍ فَأَرْسَلَتْ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَيْفَ أَصْنَعُ قَالَ اغْتَسِلِي وَاسْتَثْفِرِي بِثَوْبٍ وَأَحْرِمِي

    “আমরা যুল—হুলাইফা নামক স্থানে পৌঁছলে আসমা বিনতে উমাইস (রা.) মুহাম্মাদ ইবন আবূ বকরকে প্রসব করলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)—এর নিকট লোক পাঠিয়ে জানতে চাইলেন, এখন আমি কী করবো? তিনি বলেন, তুমি গোসল করো, এক খন্ড কাপড় দিয়ে পট্টি বাঁধো এবং ইহরামের পোশাক পরিধান করো।” [ইবন মাজাহ, আস—সুনান, ৩০৭৪]

    গোসল করা সম্ভব না হলে উযু করা। উযু—গোসল কোনটাই যদি করার সুযোগ না থাকে তাহলেও কোন সমস্যা নেই। এক্ষেত্রে তায়াম্মুম করতে হবে না। কেননা গোসলের উদ্দেশ্য হচ্ছে, পরিচ্ছন্নতা অর্জন ও দুর্গন্ধমুক্ত হওয়া। তায়াম্মুম দ্বারা এই উদ্দেশ্য হাসিল হয় না।

  • সুগন্ধি ব্যবহার: ইহরাম বাঁধার পূর্বে শরীরে, মাথায় ও দাড়িতে উত্তম সুগন্ধি ব্যবহার করা। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইহরাম বাঁধার পূর্বে সুগন্ধি ব্যবহার করেছেন। আইশা (রা.) বলেন,

    عَنْ عَائِشَةَ، — رضى الله عنها — قَالَتْ كُنْتُ أُطَيِّبُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَبْلَ أَنْ يُحْرِمَ وَيَوْمَ النَّحْرِ قَبْلَ أَنْ يَطُوفَ بِالْبَيْتِ بِطِيبٍ فِيهِ مِسْكٌ ‏

    “আমি নবী (সা.)—কে তার ইহরাম বাঁধার পূর্বে এবং কুরবানীর দিন বায়তুল্লাহ তাওয়াফের পূর্বে কস্তুরী মিশ্রিত সুগন্ধি মেখে দিতাম।” [মুসলিম, আস—সহীহ, ২৭৩১]

  • সেলাইবিহীন সাদা পরা ও সাদা চাদর গায়ে দেয়া এবং এক জোড়া জুতো বা স্যান্ডেল পায়ে দেয়া। ইবন উমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,

    وليُحْرِمْ أحدُكم في إزارٍ ورداءٍ ونعليْنِ

    “তোমাদের প্রত্যেকে যেনো একটি যেনো একটি লুঙ্গি, একটি চাদর এবং এক জোড়া চপ্পল পরিধান করে ইহরাম বাঁধে।’’ [আহমদ, আল—মুসনাদ, ৪৮৯৯]

    সাদা কাপড় পুরুষের সর্বোত্তম পোশাক। তাই পুরুষের ইহরামের জন্য সাদা কাপড়ের কথা বলা হয়েছে। ইহরামের ক্ষেত্রে নারীদের আলাদা কোন পোশাক নেই। শালীন ও ঢিলে—ঢালা, পর্দা বজায় থাকে এ ধরনের যেকোনো পোশাক পরে মহিলা ইহরাম বাঁধতে পারে। ইহরাম অবস্থায় সেলাইযুক্ত কাপড় পরা ও মাথা আবৃত করা পুরুষের জন্য নিষিদ্ধ হলেও নারীদের জন্য নিষিদ্ধ নয়।

  • দুই রাকাত সালাত আদায় করা: উমর (রা.) হতে বর্ণিত,

    إِنَّهُ سَمِعَ عُمَرَ يَقُولُ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم بِوَادِي الْعَقِيقِ يَقُولُ أَتَانِي اللَّيْلَةَ آتٍ مِنْ رَبِّي فَقَالَ صَلِّ فِي هَذَا الْوَادِي الْمُبَارَكِ وَقُلْ عُمْرَةً فِي حَجَّةٍ

    “তিনি বলেন, ‘আকীক উপত্যকায় অবস্থানকালে আমি নবী (সা.)—কে বলতে শুনেছিঃ আজ রাতে আমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে একজন আগন্তুক আমার নিকট এসে বললেন, আপনি এই বরকতময় উপত্যকায় সালাত আদায় করুন এবং বলুন, (আমার এ ইহরাম) হাজ্জের সাথে ‘উমরাহ’রও।” [বুখারী, আস—সহীহ, ১৫৩৪]

এসব হাদীসের আলোকে একদল আলিম বলেন, ইহরাম বাঁধার পূর্বে দুই রাক‘আত ইহরামের সালাত আদায় করা সুন্নত। আরেকদল আলেমের মতে ইহরামের জন্য কোন বিশেষ সালাত নেই। তারা বলেছেন, ইহরাম বাঁধার সময় যদি ফরয সালাতের ওয়াক্ত হয়ে যায়, তাহলে হজ ও উমরা করতে ইচ্ছুক ব্যক্তির জন্য ফরয সালাত আদায়ের পর ইহরাম বাঁধা উত্তম।

ইহরাম অবস্থায় মাস্ক পরার নিয়ম

ইহরাম অবস্থায় মাস্ক পরা কী জায়েয?

প্রয়োজনের কারণে ইহরামকারীর জন্য মাস্ক পরতে কোন অসুবিধা নেই। যেমন কোন ব্যক্তির নাকে এলার্জি থাকা; যার কারণে তার মাস্ক পরা প্রয়োজন কিংবা তীব্র ধোঁয়া অতিক্রম করাকালে মাস্ক পরা প্রয়োজন কিংবা কোন দুর্গন্ধ পার হওয়া কালে মাস্ক পরা প্রয়োজন। এতে কোন অসুবিধা নেই। [মাজমুউ ফাতাওয়া ইবন উছাইমীন, ২২/১৩০, ১৩১]

সুগন্ধিযুক্ত ক্রিম ইহরাম অবস্থায় চিকিৎসার উদ্দেশে ব্যবহার কী বৈধ?

অনেকেই হজ্জ—উমরার তাওয়াফ ও সাঈকালে দুই রানের মাঝখানে ছুলে যাওয়া ও লাল হয়ে যাওয়া রোধ করার জন্য কিছু ক্রীম ব্যবহার করেন। যেহেতু তা এক ধরণের চিকিৎসা, তাই ইহরামকালীন অবস্থায় তা ব্যবহার করতে কোন বাধা নেই। এটি সুগন্ধি শ্রেণীর কিছু নয়। তাই এটি সুগন্ধির বিধান এখানে প্রযোজ্য হবে না। [ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ২১২৮২৭]

বাংলাদেশের উমরা হাজ্জীরা কখন ইহরাম বাধঁবে?

উমরা পালনকারীদের জন্য নির্দিষ্ট স্থান থেকেই ফরজ কাজ ইহরাম বাঁধতে হয়। অঞ্চলভেদে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইহরামের জন্য পাঁচটি স্থানকে ইহরাম বাধাঁর স্থান হিসেবে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। ইবন আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত,

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَقَّتَ لأَهْلِ الْمَدِينَةِ ذَا الْحُلَيْفَةِ وَلأَهْلِ الشَّأْمِ الْجُحْفَةَ وَلأَهْلِ نَجْدٍ قَرْنَ الْمَنَازِلِ وَلأَهْلِ الْيَمَنِ يَلَمْلَمَ هُنَّ لأَهْلِهِنَّ وَلِكُلِّ آتٍ أَتَى عَلَيْهِنَّ مِنْ غَيْرِهِمْ مِمَّنْ أَرَادَ الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ فَمَنْ كَانَ دُونَ ذَلِكَ فَمِنْ حَيْثُ أَنْشَأَ حَتَّى أَهْلُ مَكَّةَ مِنْ مَكَّةَ

“নবী (সা.) মদীনাবাসীদের জন্য যুল—হুলাইফা, সিরিয়াবাসীদের জন্য জুহ্ফা, নাজদবাসীদের জন্য কারনুল মানাযিল ও ইয়ামানবাসীদের জন্য ইয়ালামলাম মীকাত নির্ধারণ করেছেন। উক্ত মীকাতসমূহ হাজ্জ ও ‘উমরাহ’র উদ্দেশে আগমনকারী সে স্থানের অধিবাসীদের জন্য এবং অন্য কোন এলাকার লোক ঐ সীমানা দিয়ে অতিক্রম করবে তাদের জন্যও। এছাড়াও যারা মীকাতের ভিতরের অধিবাসী তারা যেখান হতে সফর আরম্ভ করবে সেখান হতেই (ইহরাম আরম্ভ করবে) এমন কি মক্কাবাসীগণ মক্কা হতেই।” [বুখারী, আস—সহীহ, ১৫৩০]

রাসুলুল্লাহ (সা.) ঐ অঞ্চলবাসীর জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। ঐ অঞ্চলের লোক ছাড়া যারা অন্যান্য স্থান থেকে এ মিকাতগুলো অতিক্রম করে বাইতুল্লায় আসবে, তাদের জন্যও এগুলো ইহরাম বাধাঁর স্থান। বাংলাদেশ থেকে যারা বিমানযোগে উমরা পালনে মক্কায় আসবেন, আকাশ পথে যে মিকাত পড়ে তা অতিক্রম করার পূর্বে ইহরাম বাধঁতে হবে। বাংলাদেশ থেকে যাত্রীবাহি বিমানগুলো ‘যুল—হুলাইফা’ ও যাতু ইরক’ এ দুটি মিকাতের আশেপাশে দিয়ে মিকাতে প্রবেশ করে। বিমানে সুন্নাহসম্মত ইহরাম বাধাঁ সম্ভব হয় না এবং কখনো কখনো মিকাত অতিক্রম সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা যায় না। সেক্ষেত্রে তারা রওয়ানার পূর্বেই দেশ থেকে ইহরাম বেঁধে রওয়ানা হতে পারেন। বাংলাদেশী উমরাযাত্রীরা নিজ গৃহ থেকে ইহরাম বেধেঁ রাওয়ানা হওয়া সুবিধাজনক।

ঢাকা থেকে ইহরামের কাপড় পড়ে বিমানে নিয়ত পড়া যাবে কী?

ঢাকা থেকে ইহরামের কাপড় পড়ে বিমানে নিয়ত বা প্রথম তালবিয়া পড়া যাবে। যারা আকাশ পথে বিমানে ইহরাম বাধঁতে চান তারা বিমান মিকাতের কাছাকাছি পৌছঁলে যখন ক্যাপ্টেনের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, তখনই ইহরাম বাঁধতে পারেন। অথবা যারা ঢাকা থেকে সরাসরি পবিত্র নগরী মক্কায় গমন করবে তারা ঢাকা থেকেই ইহরামের কাপড় পড়ে নিয়ত করে যেতে পারেন। আবার ইহরামের কাপড় পরে মিকাতের কাছাকাছি গিয়েও নিয়ত করা যাবে। বিমানে সুন্নাহসম্মত ইহরাম বাধাঁ সম্ভব হয় না এবং কখনো কখনো মিকাত অতিক্রম সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা যায় না। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশী উমরাকারীগণ মক্কার উদ্দেশে রওয়ানার পূর্বেই ঢাকা থেকে ইহরাম বেঁধে রওয়ানা হতে পারেন। ইহরাম বাধাঁ বলতে দু’টি কাজকে বুঝায়: ইহরামের কাপড় পড়া এবং উমরার ক্ষেত্রে ’লাব্বাইকা ওমরাতান’ আর হজ্জেও ক্ষেত্রে ‘লাব্বাইকা হাজ্জান’ বলে নিয়ত বা প্রথম তালবিয়া পাঠ করা। ঢাকা থেকে কাপড় পরিধান করে বিমান মিকাত অতিক্রম করার পূর্বমূহুর্তে নিয়ত পড়াতেও কোনো সমস্যা নেই।

ইহরাম পড়া অবস্থায় সর্বদা ওযু থাকা আবশ্যক কি—না?

ইহরাম অবস্থায় ওযু নষ্ট হয়ে গেলে এতে কোনো সমস্যা নেই। এতে ইহরামের কোনো ক্ষতি হবে না। তবে উমরার ওয়াজিব সমুহের মাঝে তাওয়াফ পবিত্র অবস্থায় আদায় করতে হয়। ফলে তাওয়াফরত অবস্থায় ওযু নষ্ট হলে অবশিষ্ট তাওয়াফ ওযু করে সম্পন্ন করতে হবে।

ইহরামের সুন্নাহসমূহ

ইহরামের সুন্নাহসম্মত পদ্ধতি ধারাবাহিকভাবে বলুন?

ইহরাম বাধাঁর সময় ধারাবাহিকভাবে নিন্মোক্ত সুন্নাহগুলো পালন করতে পারেন—

  • ইহরামের পূর্বে ওযূ বা গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা উত্তম (তিরমিজী, আস—সুনান, ৮৩০) নারীরা নাপাক অবস্থাতেও ইহরাম বাঁধতে পারবেন [মুসলিম, আস—সহীহ, ১২১৮]
  • পুরুষদের জন্য সাদা সেলাই বিহীন লুঙ্গী ও চাদর পরিধান করা [আহমাদ, আল—মুসনাদ, ৪৮৯৯] নারীদের ক্ষেত্রে যে কোন ধরনের শালীন পোষাক পরিধান করা। তবে নেকাব ও হাতমোজা ব্যবহার থেকে বিরত থাকা [আবু দাউদ, আস—সুনান, ১৮২৭]
  • দেহে সুগন্ধি ব্যবহার করা [মুসলিম, আস—সহীহ, ১১৯০] তবে পোষাকে নয় [বুখারী, আস—সহীহ, ১৭৮৯]
  • যে কোন ফরয সালাতের পরে কিংবা দু’রাক‘আত নফল সালাতের পরে ইহরাম বাঁধা। [বুখারী, আস—সহীহ, ১৫৩৪]

ইহরাম অবস্থায় অনিচ্ছাকৃতভাবে কোনো প্রাণী মেরে ফেললে কোন দম দিতে হবে কী?

ইহরাম অবস্থায় অনিচ্ছাকৃতভাবে কোনো প্রাণী যেমন বিড়াল মেরে ফেললে কিছু ওয়াজিব হবে না। [ফাতাওয়া ইবন উসাইমীন, ২/৬৭৬]

ইহরাম বাধা অবস্থায় যদি মশা কামড় দেয়, তাহলে কি মশা মারা যাবে?

মানুষের জন্য ক্ষতিকারক প্রাণী যেমনঃ কুকুর, চিল, কাক, ইঁদুর, সাপ, বিচ্ছু, মশা, মাছি ও পিঁপড়া মারা যাবে। ইবন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত.

عَنْ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ خَمْسٌ مِنْ الدَّوَابِّ لَا جُنَاحَ عَلَى مَنْ قَتَلَهُنَّ أَوْ فِي قَتْلِهِنَّ وَهُوَ حَرَامٌ الْحِدَأَةُ وَالْفَأْرَةُ وَالْكَلْبُ الْعَقُورُ وَالْعَقْرَبُ وَالْغُرَابُ

“নবী (সা.) বলেছেন, পাঁচ প্রকার জন্তুকে ইহরাম অবস্থায় মারলে কোন পাপ হবে না। সেগুলো হলো। চিল, ইদুর, দংশনকারী কুকুর, বিচ্ছু এবং কাক।” [আন—নাসাঈ, আস—সুনান, ২৮৩৫]

ইহরামের কাপড় পড়তে আলাদা কোনো সূরা পড়তে হয় কি না?

না। আলাদা কোনো সূরা পড়ার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। ইহরামের কাপড় পরিধান করে তালবিয়া পাঠের মাধ্যমে হজ্জ বা উমরাকারী মুহরিম হন। তালবিয়ার শব্দগুলো পড়ার জন্য নবীজি (সা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে,

أَتَانِى جِبْرِيلُ فَأَمَرَنِى أَنْ آمُرَ أَصْحَابِى وَمَنْ مَعِى أَنْ يَرْفَعُوا أَصْوَاتَهُمْ بِالإِهْلاَلِ — أَوْ قَالَ — بِالتَّلْبِيَة

“আমার নিকট জিবরীল (আ.) এসে আদেশ দিলেন। আমি যেনো আমার সাথিদেরকে তালবিয়া দ্বারা তাদের কণ্ঠস্বর উচুঁ করতে নির্দেশ দেই।’’ [আবূ দাউদ, আস—সুনান, ১৮১৪]

পুরুষ—মহিলা সকলের ক্ষেত্রেই তালবিয়া পাঠ ও অন্যান্য যিক্রসমূহের গুরুত্ব সমান। পুরুষগণ ইহরাম বাঁধার সময় ও পরে উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করবেন। নারীরা পুরুষের মত উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করবে না। নিজে শুনতে পারে এতটুকু আওয়াযে মহিলারা তালবিয়া পাঠ ও অন্যান্য যিক্রসমূহ করবে।

ইহরাম কতক্ষন পড়ে থাকতে হয়?

চুল কেটে হালাল হওয়ার আগ পর্যন্ত ইহরাম পড়ে থাকতে হবে। হালাল হওয়ার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,

أَحِلُّوا مِنْ إِحْرَامِكُمْ بِطَوَافِ الْبَيْتِ وَبَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ وَقَصِّرُوا

বাইতুল্লাহর তাওয়াফ ও সাফা—মারওয়ার সা‘ঈ সমাধা করে তোমরা ইহরাম ভঙ্গ করে হালাল হয়ে যাও এবং চুল ছোট কর। [বুখারী, আস—সহীহ, ১৫৬৮]

ইহরামের কাপড় পড়ে ঘুমানোর বিধান কি?

ইহরামের কাপড় পরিধান করে ঘুমানো যাবে। বস্তুত দূরদুরান্ত থেকে আগত হজ্জ ও উমরার মুহরিম ক্লান্ত হয়ে ঘুমের ঘোরে চলে যেতে পারেন। এমতাবস্থায় তার ইহরাম খুলে অন্য কাপড় পড়া জায়েজ নয়।

কোন মুহরিম ব্যক্তির জন্য ঘুমের সময় মাথা ঢাকা জায়েয আছে কিনা?

“যদি মুহরিম ব্যক্তি নারী হয় তাহলে তার জন্য মাথা ঢাকা বৈধ। আর যদি পুরুষ হয় তাহলে ঘুমের মধ্যে হোক কিংবা জাগ্রত অবস্থায় হোক মাথা ঢাকা বৈধ নয়। তবে তিনি যদি ঘুমের ঘোরে মাথা ঢেকে থাকেন, জাগ্রত হওয়ার সাথে সাথে কাপড় সরিয়ে নেয়া তার উপর ফরজ; কাপড় সরিয়ে নিলে তাকে কোন দম দিতে হবে না। কারণ ঘুমন্ত ব্যক্তি দায়মুক্ত।” [শাইখ সালিহ আল—মুনাজ্জিদ, ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব, ১০৬৫৬২]

উমরাহ করার জন্য ইহরামের কাপড় কয়টি নিলে ভাল হয়?

ইহরামে জন্য পুরুষদের দু’টি সেলাইবিহীন কাপড় নিতে হয়, যার একটি লুঙ্গি ও অন্যটি চাদর হিসেবে গায়ে জড়িয়ে নেয়া হয়। েইহরামের কাপড় যে কোনো কারণে অপবিত্র হওয়ার আশংকায় কিংবা সঙ্গত কারণে পরিবর্তনের প্রয়োজন পূরণে হজ্জ বা উমরাকারী অন্তত দুই সেট ইহরামের কাপড় ব্যবস্থা করতে পরেন। এতে করে পরিধান করা ইহরামের কাপড় অপবিত্র হয়ে গেলে সঙ্গে রাখা অন্য সেট পরিধান করতে পারবেন।

ইহরামকারীর জন্য ছাতার বিধান
ইহরামকারীর জন্য ছাতার ছায়া নেয়া কি জায়েয?

সূর্যের উষ্ণতা কিংবা বৃষ্টি থেকে সুরক্ষার উদ্দেশ্যে ছাতা ব্যবহার করা জায়েজ। অনুরূপ কাজ হাদীসে মাথা ঢেকে রাখার নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়বে না। বস্তুত তা মাথা ঢাকা নয়; বরং রোদ—বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আশ্রয়। বিদায় হজ্জে রাসূলুল্লাহ (সা.) অনুরূপ ছায়া গ্রহণের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে।

عَنْ أُمِّ الْحُصَيْنِ تَقُولُ: حَجَجْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حَجَّةَ الْوَدَاعِ. فَرَأَيْتُهُ حِينَ رَمَى جَمْرَةَ الْعَقَبَةِ وَانْصَرَفَ وَهُوَ عَلَى رَاحِلَتِهِ. وَمَعَهُ بِلَالٌ وَأُسَامَةُ. أَحَدُهُمَا يَقُودُ بِهِ رَاحِلَتَهُ. وَالْآخَرُ رَافِعٌ ثَوْبَهُ عَلَى رَأْسِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنَ الشَّمْسِ.

“উম্মুল হুসায়ন (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাথে বিদায় হাজ্জ করেছি এবং আমি দেখেছি, তিনি জামরাতুল আকাবায় পাথর নিক্ষেপ করে সওয়ারীতে চড়ে ফিরে আসেন এবং তার সাথে ছিলেন বিলাল ও উসামা (রা.)। তাদের একজন উটের লাগাম ধরে তা টেনে নিচ্ছিলেন এবং অপরজন সূর্যের তাপের কারণে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর মাথার উপর কাপড় ধরে রাখছিলেন।” [মুসলিম, আস—সহীহ, ১২৯৮]

উক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইহরাম অবস্থায় হালাল হওয়ার পূর্বে কাপড় দিয়ে ছায়া গ্রহণ করেছেন। ফলে সূর্যের উষ্ণতা কিংবা বৃষ্টি থেকে সুরক্ষার উদ্দেশ্যে ছাতা ব্যবহার করা জায়েজ।

একবারে ইহরাম পড়ে কি একাধিক উমরাহ করা যায়?

না। একবার ইহরাম পড়ে একাধিক উমরার সুযোগ নেই। উমরার চারটি ওয়াজিব কাজ। ইহরাম বাধাঁ, তাওয়াফ করা, সাঈ করা এবং মাথামুণ্ডন বা চুল কেটে হালাল হওয়া। ইহরাম বেেঁধ ৪র্থ কাজটি করার পর ইহরাম আর থাকে না। তাহলে দ্বিতীয় উমরা করার সুযোগ কোথায়? পররবর্তী উমরার জন্য আবার নিকটবর্তী মিকাতে এসে ইহরাম বাধঁতে হবে।

এক সফরে একাধিকবার ওমরা করার নিয়তে আয়েশা মসজিদ থেকে এহরাম বাধা কতটুকু সহীহ?

মসজিদে আইশা মক্কার তানঈম এলাকায় অবস্থিত। হেরেমের বাইরে এহরাম বেঁধে উমরাহ করার এটি মক্কা থেকে সর্বাধিক নিকটবতী স্থান। বিদায় হজ্জের সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) উম্মুল মুমিনিন আইশা (রা.)—কে তার ভাই আবদুর রহমান (রা.)—এর সঙ্গে হারামের বাইরে এখান থেকে উমরার ইহরাম বাঁধার জন্য পাঠিয়েছিলেন। عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَ مَعَهَا أَخَاهَا عَبْدَ الرَّحْمَنِ فَأَعْمَرَهَا مِنْ التَّنْعِيمِ وَحَمَلَهَا عَلَى قَتَبٍ “আইশা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, নবী (সা.) এর সাথে তার ভাই আবদুর রহমান (রা.) কে প্রেরণ করেন। তিনি আইশাকে ছোট্র একটি হাওদায় বসিয়ে তান’ঈম নামক স্থান থেকে উমারা করাতে নিয়ে যান।” [বুখারী, আস—সহীহ, ১৫১৬]

এ কারণে এখান থেকে মক্কাবাসীরা ওমরার জন্য ইহরাম বেঁধে থাকেন। বিদেশি হাজিরাও কোন সফরের দ্বীতিয়—তৃতীয় ওমরার জন্য ওখান থেকে ওমরার ইহরাম বেঁধে থাকেন। এছাড়া যদি অন্য উদ্দেশ্যে কেউ মক্কায় এসে থাকেন, অতঃপর হজ্জ বা ওমরাহ করতে চান, তাহ’লে হারামের বাইরে তান‘ঈম বা ‘জিআরানা’ এলাকায় গিয়ে তিনি ইহরাম বেঁধে আসতে পারেন। বিশুদ্ধ হাদীস থেকে তা প্রমাণিত হয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে উমরাকারীগণ যদি নিজ বাড়ী বা ঢাকা এয়ারপোর্টে ইহরাম পড়া কি তা জায়েয?

হ্যাঁ, তা জায়েয আছে। ইহরামের কাপড় মীকাত থেকে পরা সুন্নাত হলেও বিমান বা যানবাহনে উঠার আগেই গোসল করে ইহরামের কাপড় পরে নিতে পারেন। তবে নিয়ত করা উচিৎ মিকাতে পৌঁছে বা এর পূর্বক্ষণে। বিভিন্ন এয়ারলাইনসে ট্রানজিট পেসেন্জার হিসেবে যারা আবুধাবী, দুবাই, কুয়েত, দুহা, বাহরাইন, মাসকাট ও সানআ এয়ারপোর্টে নামবেন তারা সেখানেও পরিচ্ছন্নতা ও অজু—গোসলের কাজ সেরে ইহরামের কাপড় পরে নিতে পারেন। এরপর বিমানে যখন মীকাতে পৌছার ঘোষণা দেবে তখনই নিয়ত করে নেবেন এবং তালবিয়াহ পাঠ শুরু করবেন। তবে ঘোষণা দেয়ার সঙ্গেই নিয়ত করে ফেলবেন। কারণ বিমান খুবই দ্রুত চলে। আপনার নিয়ত করা যেন মিকাতে পৌঁছার আগেই হয়ে যায়। তা না হলে দম দিতে হবে।

Apply for an Umrah visa and experience the hassle-free journey to the city of Makkah.

Arrow