কাবা ঘর ইসলামের হৃদয়স্থল। এটি শুধু এক টুকরো পাথরের ঘর নয়—এটি
আল্লাহর একত্বের প্রতীক, মানবজাতির ঈমানের কেন্দ্রবিন্দু। সারা বিশ্বের
কোটি কোটি মুসলমান এই ঘরটির দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন, এবং জীবনে
একবার হলেও এটি দর্শনের আকাঙ্ক্ষা রাখেন।
মক্কা শরীফের বুকে দাঁড়িয়ে থাকা কাবা ঘরের ইতিহাস হাজার বছরেরও
পুরোনো। নবী আদম আ.-এর সময় থেকে শুরু হয়ে নবী মুহাম্মদ সা.-এর যুগ
পর্যন্ত এর নির্মাণ ও সংস্কার হয়েছে বহুবার। প্রতিটি যুগেই কাবা ঘর
মানবজাতিকে তাওহীদের (এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস) বার্তা দিয়েছে। এই
মহিমান্বিত ও পবিত্র ঘরকে এক পলক দেখার জন্য লক্ষ লক্ষ মুসলিম
উমরাহ করার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন মক্কা নগরীতে।
ইতিহাসের সূচনালগ্নেই কাবা ঘরের প্রথম ভিত্তি স্থাপিত হয় নবী আদম
আ.-এর হাতে। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে পৃথিবীতে পাঠানোর পর ইবাদতের জন্য
একটি ঘর তৈরির নির্দেশ দেন, যাতে তিনি আল্লাহর বন্দেগিতে সময় কাটাতে
পারেন। ফেরেশতারা বায়তুল মামুর (আসমানের কাবা)-এর অনুকরণে পৃথিবীতে এর
স্থান নির্ধারণ করে দেন।
তখন আদম আ. ও তাঁর বংশধররা সেখানে নামাজ আদায় করতেন, কাবা ঘরের
চারপাশে তাওয়াফ করতেন। সময়ের সঙ্গে বন্যা ও প্রাকৃতিক কারণে ঘরটি
বিলুপ্ত হয়ে যায়, কিন্তু তার পবিত্র অবস্থান অটুট থাকে।
নবী নূহ আ.: বন্যায় কাবা ঘরের বিলোপ
নবী নূহ আ.-এর যুগে পৃথিবী এক ভয়াবহ দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছিল।
মানুষ তখন আল্লাহর পথে থেকে বিচ্যুত হয়ে বহু মূর্তি ও মিথ্যা দেবতার
উপাসনা শুরু করেছিল। আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে শাস্তি দিতে মহাপ্লাবন
বা “নূহের বন্যা” প্রেরণ করেন—যা পৃথিবীর ইতিহাসে এক মহা বিপর্যয়
হিসেবে চিহ্নিত।
এই মহাপ্লাবনের জলোচ্ছ্বাসে তৎকালীন কাবা ঘরের কাঠামো সম্পূর্ণ ধ্বংস
হয়ে যায়। পাহাড়সম ঢেউ মক্কার ভূমিও গ্রাস করে নেয়। মানুষের বসতি,
ইবাদতের স্থান—সবই পানির নিচে বিলীন হয়ে যায়। কাবা ঘরের মূল ভিত্তি
মাটির নিচে চাপা পড়ে, কেবল একটি পবিত্র স্থানের স্মৃতি রয়ে যায়
আল্লাহর হেফাজতে।
দীর্ঘ সময় ধরে মানুষ কাবা ঘরের অবস্থান ভুলে যায়। পৃথিবীতে বহু নবী ও
জাতি আসে, কিন্তু কাবার অবস্থান কেউ নির্ধারণ করতে পারে না। তবুও
আল্লাহ তায়ালা সেই স্থানকে বিলুপ্ত হতে দেননি; তা তাঁর বিশেষ কুদরতে
সংরক্ষিত ছিল পৃথিবীর মানচিত্রে।
বলা হয়, বন্যা শেষে যেখানে কাবা ঘর ছিল, সেখানে একটি
উঁচু পাহাড়ি চিহ্ন দৃশ্যমান ছিল—যা “বাইতুল আতীক”-এর স্থল
হিসেবে পরিচিত ছিল প্রাচীন আরবদের কাছে। এই পবিত্র স্থানের চিহ্নই
পরবর্তীকালে নবী ইব্রাহিম আ.-এর মাধ্যমে আবার আলোকিত হয়, যখন আল্লাহ
তাঁকে সেই জায়গায় কাবা ঘর পুনর্নির্মাণের নির্দেশ দেন।
নবী ইব্রাহিম আ. ও ইসমাইল আ.: কাবা ঘরের পুনর্নির্মাণ
দীর্ঘ সময় পর, যখন পৃথিবী তাওহীদের আলো থেকে অনেকটাই বিচ্যুত, তখন
আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় বান্দা নবী ইব্রাহিম আ.-কে কাবা ঘর
পুনর্নির্মাণের দায়িত্ব দেন। ইব্রাহিম আ. তখন মক্কার মরুভূমিতে তাঁর
স্ত্রী হাজেরা আ. ও পুত্র ইসমাইল আ.-কে রেখে গিয়েছিলেন আল্লাহর আদেশে।
সেই তপ্ত বালুকাবেলায় ইসমাইল আ.-এর ছোট পায়ের আঘাতে যে পানি ফেটে বের
হয়, সেটিই আজকের জমজম কূপ।
সময়ের পরিক্রমায় ইসমাইল আ. বড় হন, আর আল্লাহ তায়ালা ইব্রাহিম আ.-কে
পুনরায় আদেশ দেন—
“আমার ঘরকে নির্মাণ কর, যাতে মানুষ সেখানে তাওয়াফ করে, রুকু ও সেজদা
করে।” সূরা আল-হাজ্জ (২২:২৬)
তখন পিতা-পুত্র মিলে শুরু করেন পবিত্র কাবা ঘরের পুনর্নির্মাণ। তাঁরা
মক্কার আশপাশের পাহাড় থেকে কালো পাথর সংগ্রহ করতেন, হাতে তুলে আনতেন,
একে একে ভিত্তি গেঁথে তাতে দেয়াল তুলতেন।
কুরআনের সাক্ষ্য
এই ঐতিহাসিক ঘটনার সুন্দর বর্ণনা পাওয়া যায় কুরআনের
সূরা আল-বাকারা (আয়াত ১২৭)-এ :
“যখন ইব্রাহিম ও ইসমাইল কাবা ঘরের ভিত্তি স্থাপন করছিলেন, তখন তাঁরা
বলেছিলেন, ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের থেকে এটি কবুল করে নাও;
নিশ্চয় তুমি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’”
নির্মাণের ধরণ ও বৈশিষ্ট্য
নবী ইব্রাহিম আ. পাথর দিয়ে ঘরটির ভিত্তি নির্মাণ করেন এবং নবী ইসমাইল
আ. তাঁকে সহায়তা করেন। ঘরটি ছিল সরল কিন্তু দৃঢ় কাঠামোর, ছাদবিহীন
এবং প্রায় নয় কিউবিট উঁচু। কাবার দক্ষিণ-পূর্ব কোণে তাঁরা স্থাপন
করেন
হাজরে আসওয়াদ (কৃষ্ণপাথর) — যা জান্নাত থেকে প্রেরিত বলে
বিশ্বাস করা হয়। এই পাথরটি সময়ের সাথে পরিবর্তিত হলেও তার মূল
পবিত্রতা অটুট রয়েছে।
নবী ইব্রাহিম আ. নির্মাণ শেষে আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন—
“হে আমার পালনকর্তা! আমি আমার সন্তানদের এখানে স্থাপন করেছি তোমার
পবিত্র ঘরের কাছে, যাতে তারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে।”
এই দোয়ার মধ্য দিয়েই কাবা ঘর পৃথিবীর ইবাদতের কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
কাবা ঘরের ঐশ্বরিক ভিত্তি
এই পুনর্নির্মাণই আজকের কাবা ঘরের প্রকৃত ভিত্তি। এখান থেকেই শুরু হয়
তাওয়াফের ইতিহাস, এখান থেকেই
হজের আনুষ্ঠানিকতা,
আর এখান থেকেই মুসলমানদের একত্ব ও আত্মসমর্পণের সূচনা।
নবী ইব্রাহিম আ. ও ইসমাইল আ.-এর হাতে নির্মিত এই ঘর আজও কোটি মানুষের
হৃদয়ের তৃষ্ণা মেটায়—যেখানে দাঁড়িয়ে মানুষ আল্লাহর সামনে চোখের
পানি ফেলে, ক্ষমা চায় এবং তাওহীদের চিরন্তন বার্তা স্মরণ করে।
কুরাইশ আমল ও নবী মুহাম্মদ সা.: কাবার ঘরের সংস্কার
নবী মুহাম্মদ সা.-এর যৌবনকালে, কুরাইশ গোত্র কাবা ঘরের দায়িত্বে ছিল।
তখন এক ভয়াবহ বন্যায় কাবার দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে, কাঠামো
দুর্বল হয়ে যায়। কুরাইশ নেতারা পরামর্শ করে ঘরটি সম্পূর্ণভাবে
পুনর্নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা চেয়েছিলেন, কাবা ঘর যেন আরও
মজবুত, সুন্দর ও নিরাপদ হয়।
নবী মুহাম্মদ সা. তখন ছিলেন প্রায় ৩৫ বছর বয়সী—সততা,
বুদ্ধিমত্তা ও ন্যায়পরায়ণতার জন্য তিনি তখনই “আল-আমিন” নামে পরিচিত।
কুরাইশরা জানতেন, এই ঘর পুনর্নির্মাণ শুধু স্থাপত্য নয়, বরং এটি তাদের
সম্মান ও ঈমানের প্রতীক।
কুরাইশের চার প্রধান গোত্র মিলে নির্মাণ কাজ শুরু করে। সবাই পরিশ্রমে
অংশ নেয়— কেউ পাথর বহন করে, কেউ দেয়াল তোলে, কেউ সাজসজ্জার কাজ করে।
নবী সা. নিজেও পাথর বহনে অংশ নেন, যা তাঁর বিনয় ও দায়িত্ববোধের
প্রমাণ।
হাজরে আসওয়াদ স্থাপন নিয়ে বিরোধ
নির্মাণের শেষ পর্যায়ে আসে হাজরে আসওয়াদ—জান্নাত থেকে আগত পবিত্র
কৃষ্ণপাথর—স্থাপনের পালা। তখন প্রশ্ন ওঠে, “কে এটি স্থাপন করবে?”
প্রত্যেক গোত্রই দাবি করে, “আমরাই এই মর্যাদা পাব।” এ নিয়ে বড় ধরনের
বিবাদ দেখা দেয়, এমনকি সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি হয়।
ঠিক সেই সময়, এক প্রবীণ কুরাইশ নেতা প্রস্তাব দেন—“আগামীকাল যে
ব্যক্তি সবার আগে কাবার ফটকে প্রবেশ করবে, তাকেই বিচারক ধরা হবে।”
পরদিন সকালে প্রথম প্রবেশ করেন নবী মুহাম্মদ সা.। তাঁকে দেখে
সবাই একবাক্যে বলে ওঠে,
“এ তো আল-আমিন! আমরা তাঁর বিচার মেনে নেব।”
নবী সা. অত্যন্ত প্রজ্ঞার সঙ্গে সমাধান দেন—তিনি একটি কাপড় আনিয়ে
হাজরে আসওয়াদ সেটিতে রাখেন। তারপর চারটি গোত্রের চার নেতা সেই কাপড়ের
চার কোণা ধরে পাথরটি কাবার দেয়ালের কাছে নিয়ে আসেন। অবশেষে নবী
মুহাম্মদ সা. নিজ হাতে পবিত্র পাথরটি যথাস্থানে স্থাপন করেন।
কুরাইশ আমলের কাবা ঘরের স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য
কুরাইশ আমলে নির্মিত কাবা ঘর ছিল পূর্বের তুলনায় আরও সুনির্মিত ও
সুন্দর। তাঁরা কাবা ঘরের পুরনো কাঠামো ভেঙে নতুনভাবে পাথর ও কাঠ দিয়ে
এটি গড়ে তোলেন। মজবুত ভিত্তি ও সুষম গঠন ছিল এর প্রধান বৈশিষ্ট্য।
ঘরটির
উচ্চতা নির্ধারণ করা হয় প্রায় ১৮ কিউবিট (প্রায় ৮.৫ মিটার),
এবং প্রতিটি দিকের দৈর্ঘ্য ছিল আনুমানিক ২৫ থেকে ৩০ ফুট।
কুরাইশরা প্রথমবারের মতো কাবার ছাদ তৈরি করেন, যা পূর্বে খোলা
ছিল।
দরজা রাখা হয় মাটির থেকে প্রায় ৭ ফুট উঁচুতে, যাতে শুধুমাত্র
নির্বাচিত ব্যক্তিরাই ভেতরে প্রবেশ করতে পারেন।এই উঁচু দরজা রাখার কারণ
ছিল—বন্যা বা বালুঝড়ের সময় কাবার ভেতরে পানি না ঢোকা, এবং পবিত্রতা
রক্ষা করা।
ভেতরের কাঠামোয় তিনটি খুঁটি বসানো হয়, যা ছাদকে ধারণ করে। এছাড়া
ঘরের ভেতর এক কোণে রাখা হয় সম্পদ, দান ও উপহার—যা কাবার পবিত্রতার
প্রতীক হিসেবে গণ্য হতো। দেয়ালের বাইরের অংশে ব্যবহৃত হয় ইয়েমেন ও
সিরিয়ার পাথর। ঘরটির উপরে সেই সময় কালো কাপড় (কিসওয়া) দিয়ে
আচ্ছাদিত করা হয়নি; এটি পরবর্তীতে ইসলামী যুগে শুরু হয়।
এই সংস্কারের মাধ্যমে কুরাইশ আমলে কাবা ঘর স্থাপত্যের দিক থেকে দৃঢ়,
নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ রূপ পায়—যা আজও ইসলামী ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য
অংশ।
ইসলামি খিলাফতের যুগে কাবা ঘরের পুনর্গঠন
নবী মুহাম্মদ সা.-এর পর ইসলামী ইতিহাসে কাবা ঘরকে কেন্দ্র করে শুরু হয়
নতুন এক অধ্যায়। খিলাফতের যুগে মুসলমান শাসকরা শুধু রাজনৈতিক শক্তি
নয়, বরং ধর্মীয় দায়িত্ববোধ থেকেও কাবা ঘরের মর্যাদা রক্ষায় কাজ
করেন। বিভিন্ন সময় বন্যা, অগ্নিকাণ্ড ও সামাজিক পরিবর্তনের কারণে কাবা
ঘরে সংস্কার করা হয়।
এই সংস্কারগুলো ছিল কেবল স্থাপত্যের নয়, বরং এটি ছিল
ঈমান, ঐতিহ্য ও সম্মানের সংরক্ষণ প্রচেষ্টা।
হযরত ইবনে যুবায়ের (রা.) – ৬৮ হিজরি
ইসলামী খিলাফতের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করেন
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রা.) । তিনি নবী ইব্রাহিম আ.-এর
মূল কাঠামো অনুসারে কাবা ঘর পুনর্নির্মাণ করেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল, কাবা
যেন আবার তার আদিম রূপে ফিরে আসে—যেমনটি ইব্রাহিম আ. ও ইসমাইল আ.-এর
হাতে গড়ে উঠেছিল।
এই সংস্কারে তিনি কাবা ঘরের দরজা মাটির সমান করে দেন, যাতে
সাধারণ মানুষও সহজে ভেতরে প্রবেশ করে নামাজ ও দোয়া করতে পারে। এছাড়া
তিনি হাতীম অংশকেও (যা আগে কাবার বাইরে ছিল) পুনরায় কাবা ঘরের
অংশ হিসেবে যুক্ত করেন।
হযরত হজ্জাজ বিন ইউসুফ – ৭৪ হিজরি
কয়েক বছর পর খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের নির্দেশে
হযরত হজ্জাজ বিন ইউসুফ কাবা ঘর পুনরায় সংস্কার করেন। তিনি
ইবনে যুবায়ের (রা.)-এর করা পরিবর্তনগুলো কিছুটা ফিরিয়ে আনেন—দরজাটি
আবার মাটির থেকে উঁচু করা হয়, এবং হাতীম অংশটি পূর্বের মতো কাবার
বাইরে রাখা হয়।
হজ্জাজের সংস্কার মূলত স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে
ছিল। এই সংস্কারকৃত কাঠামোই আজও বিদ্যমান—যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে
মুসলিম উম্মাহর ইবাদতের কেন্দ্র হিসেবে অটুট রয়েছে।
আধুনিক যুগে কাবা শরীফের পুনর্নির্মাণ ও সৌন্দর্যবর্ধন
আধুনিক সৌদি যুগে কাবা ঘর ও মসজিদুল হারামকে ঘিরে ব্যাপক উন্নয়ন
হয়েছে। রাজপরিবারের বিশেষ তত্ত্বাবধানে কাবা ঘরের মর্যাদা রক্ষা ও
দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।
প্রতি বছর নতুন কিসওয়া (কালো কাপড়) বদলানো হয়।
তাওয়াফের এলাকা প্রশস্ত করা হয়েছে যাতে লাখো মানুষ একসাথে ইবাদত
করতে পারেন।
পুরো এলাকা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর করা হয়েছে।
কাবা ঘরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
কাবা ঘর ইসলামের হৃদয় ও মুসলমানদের ঐক্যের কেন্দ্রবিন্দু। এটি শুধু
একটি স্থাপনা নয়—এটি ঈমান, সমতা ও মানবতার প্রতীক। নিচে কাবা ঘরের
গুরুত্ব ও তাৎপর্য সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:
আল্লাহর ঘর হিসেবে মর্যাদা: কাবা ঘর পৃথিবীর প্রথম ইবাদতখানা,
যা আল্লাহ তায়ালা নিজ ঘর হিসেবে ঘোষণা করেছেন। মুসলমানরা একে
সর্বোচ্চ পবিত্র স্থান হিসেবে শ্রদ্ধা করেন।
নামাজের কেন্দ্রবিন্দু: সারা বিশ্বের মুসলমান প্রতিদিন নামাজে
মুখ ফেরান কাবা ঘরের দিকে। এই এক দিকই সমগ্র উম্মাহকে এক কাতারে
নিয়ে আসে।
ঐক্যের প্রতীক: কাবা ঘর প্রমাণ করে যে ইসলাম বর্ণ, ভাষা বা
অবস্থানে পার্থক্য করে না। মক্কার মাটিতে সব মুসলমান একই সারিতে
দাঁড়িয়ে ইবাদত করেন।
হজ ও উমরাহর কেন্দ্র: হজ ও উমরাহর মূল আনুষ্ঠানিকতা কাবা ঘরকে
ঘিরেই সম্পন্ন হয়। তাওয়াফ, সায়ী ও নামাজ—সবই এই ঘরকে কেন্দ্র করে।
সমতা ও বিনয়ের শিক্ষা: এখানে ধনী-গরিব, রাজা-ভিখারি,
কালো-সাদা—সবাই সমান। পোশাকেও কোনো পার্থক্য নেই; সবাই ইহরাম পরিধান
করে আল্লাহর সামনে নিজেদের সমর্পণ করে।
আধ্যাত্মিক প্রশান্তির উৎস: কাবা ঘরের সামনে দাঁড়ালে প্রতিটি
হৃদয় নরম হয়ে যায়। মানুষের মধ্যে জন্ম নেয় আত্মসমর্পণ, ভালোবাসা
ও পরিশুদ্ধতার অনুভূতি।
তাওহীদের প্রতীক: কাবা ঘর মুসলমানদের শেখায়—সৃষ্টিকর্তা
একজন, আর তিনিই সবকিছুর মালিক। এটি আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসের
দৃশ্যমান প্রতীক।
কাবা ঘর দর্শনের সৌভাগ্য অর্জন করুন
কাবা ঘরকে কাছ থেকে দেখা, তাওয়াফ করা এবং সেখানে ইবাদত করা—এমন
সৌভাগ্য পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বরকতগুলোর একটি। প্রত্যেক মুসলমানের
হৃদয়ে এই ইচ্ছা জেগে থাকে—একবার হলেও মক্কার মাটিতে গিয়ে পবিত্র কাবা
ঘর দেখব, আল্লাহর ঘরে নামাজ আদায় করব।
যদি আপনি সেই পবিত্র স্থানের দিকে যাত্রা করতে চান, তবে
হিজাজ হজ ও উমরাহ লিমিটেড
আপনার বিশ্বস্ত সহযাত্রী হতে পারে। আমরা বাংলাদেশের অন্যতম নির্ভরযোগ্য
হজ ও উমরাহ সেবা
দিয়ে আসছি। আমাদের প্রতিষ্ঠান ভিসা, হোটেল, গাইড ও পরিবহনসহ সম্পূর্ণ
উমরাহ সেবা দিয়ে থাকে। আমাদের আকর্ষণীয় উমরাহ প্যাকেজ এর মাধ্যমে
শুরু করতে পারেন আপনার কাবা ঘর পরিদর্শনের পবিত্র যাত্রা।
ইসলামী ইতিহাস অনুযায়ী, কাবা ঘরের প্রথম ভিত্তি স্থাপন
করেছিলেন নবী আদম (আঃ)। পরবর্তীতে নবী ইব্রাহিম (আঃ) ও তাঁর
পুত্র ইসমাইল (আঃ) আল্লাহর নির্দেশে এটি পুনর্নির্মাণ করেন।
বর্তমানে কাবা ঘরের উচ্চতা প্রায় ১৩.১ মিটার (প্রায় ৪৩
ফুট) এবং প্রতিটি দিকের দৈর্ঘ্য ১১–১২ মিটার। এটি
ঘনক্ষেত্রের মতো আকারের একটি ঘর।
হাজরে আসওয়াদ বা কৃষ্ণপাথর কাবা ঘরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে
স্থাপিত। বিশ্বাস করা হয়, এটি জান্নাত থেকে পৃথিবীতে নাজিল
হয়েছিল এবং নবী ইব্রাহিম (আঃ) নিজ হাতে এটি স্থাপন করেন।
কাবা ঘর কিসওয়া নামে কালো কাপড়ে ঢাকা থাকে, যা এর পবিত্রতা
ও মর্যাদার প্রতীক। প্রতিবছর হজ মৌসুমের আগে নতুন কিসওয়া
বদলানো হয়।
ইতিহাসে বিভিন্ন সময় বন্যা, অগ্নিকাণ্ড ও যুদ্ধের কারণে
কাবা ঘরের সংস্কার হয়েছে। নবী ইব্রাহিম (আঃ), কুরাইশ আমল,
হযরত ইবনে যুবায়ের (রা.) ও হজ্জাজ বিন ইউসুফের সময় বড়
সংস্কার সম্পন্ন হয়।
কাবা ঘর মুসলমানদের ঈমান, ঐক্য ও তাওহীদের প্রতীক। এখানে
ইবাদত করা, তাওয়াফ করা ও নামাজ আদায় করা আল্লাহর নিকট মহান
সওয়াবের কাজ হিসেবে গণ্য।
কাবা ঘর আল্লাহর নির্ধারিত কিবলা। মুসলমানদের ঐক্য ও
শৃঙ্খলার প্রতীক হিসেবে সবার নামাজ একই দিকে মুখ করে আদায়
করা হয়।
সেরা উমরাহ প্যাকেজ খুঁজুন
বিশেষ মূল্যে সকল চমৎকার প্যাকেজগুলি অন্বেষণ করুন, সঙ্গে থাকছে
অভিজ্ঞ গাইড এবং শারীয়াহ পরামর্শদাতা।
Plan your hajj journey with Hijaz Hajj Agency from Bangladesh. We've designed the most affordable, professional & service focused Hajj packages for the year 2027 from Bangladesh. Contact us today for pre-registration.
We are the flagship Umrah agency in Bangladesh. We provide several Umrah services. If you want to perform Umrah easily, call us now at +8801713155258.
Find your nearby Hajj & Umrah agency associated with Hijaz Hajj Umrah Ltd. Bangladesh. Identify the trusted Umrah agents in your area and get in touch with them to facilitate your next holy journey to Makkah and Madina.